বিএনপি বাংলাদেশের একটি অন্যতম একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থাকে চাঙ্গা করার জন্য গণমুখী কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে। দলটি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে ১১ দিনের কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তৃনমূল থেকে শুরু করে দলের সর্বত্র নানা কর্মসূচির আহ্বান দিয়েছে বিএনপি। তৃনমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মাঠে নামার ডাক দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা সরকারকে তার ক্ষমতা থেকে নামানোর প্রত্যয় ও ব্যক্ত করেন।
তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঘোষিত ১১ দিনের কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ নিয়ে প্রথমবারের মতো সব বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এটি সফল করতে ইতিমধ্যে ৬১টি সাংগঠনিক জেলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিএনপি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দলের একাধিক নীতিনির্ধারকদের মতে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনগণের আস্থা বাড়িয়েছে। প্রতিটি পণ্যের দাম এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধি। সেজন্য বিএনপির মতো একটি বড় দলের দায়িত্ব আছে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার। কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি ও বর্তমান আওয়ামী লীগের আমলে দ্রব্যমূল্যের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে এ কর্মসূচি আসছে। এর আগে এসব গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে নামবে বিএনপি। পরে আবারও জেলায় জেলায় সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, চাল, ডাল, তেল, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। কোথাও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার সিন্ডিকেট করা হয়েছে। তারা কৃত্রিমভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের চরম দুর্নীতির প্রভাব বাজারে পৌঁছেছে এবং এর খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে। বিএনপির মতো দায়িত্বশীল দল স্থির থাকতে পারে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে নিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে যাচ্ছি।
বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ ইস্যুতে আজ ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়া সোমবার ১১টি মহানগরে একযোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। সিলেট মহানগরে সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ময়মনসিংহে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চট্টগ্রামে মির্জা আব্বাস, রাজশাহীতে নজরুল ইসলাম খান, খুলনায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গাজীপুরে সেলিমা রহমান, কুমিল্লায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। শাহজাহান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ। ২ মার্চ জেলা পর্যায়ে এবং ৫ মার্চ উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ হবে। এছাড়া ১২ মার্চ সারাদেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে হাট-বাজারে হাটসভা, পাঠসভা ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচি সফল করতে সব সাংগঠনিক জেলার কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হলেন- টাঙ্গাইলে অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, মানিকগঞ্জে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, গাজীপুরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নরসিংদীতে ইকবাল হাসান। চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে ফেনীতে শওকত মাহমুদ, নোয়াখালীতে আবদুস সালাম, লক্ষ্মীপুরে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণে মো. শাহজাহান, কক্সবাজার মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, খাগড়াছড়ি মো. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, রাঙামাটিতে লুৎফর রহমান কাজল ও বান্দরবানে মাহবুবুর রহমান শামীম। খুলনা বিভাগের মেহেরপুরে ডা. রফিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়ায় সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, চুয়াডাঙ্গায় আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ঝিনাইদহে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোরে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মাগুরায় মীর সরাফত আলী সপু, নড়াইলে অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বাগেরহাটে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনায় জয়নুল আবদিন ফারুক ও সাতক্ষীরায় অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ। রংপুর জেলার অন্তর্গত পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে মো. আসাদুজ্জামান রিপন, দিনাজপুরে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সৈয়দপুর ও নীলফামারীতে আবুল খায়ের ভূঁইয়া, রংপুরে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কুড়িগ্রামে হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও গাজীপুরে আজিজুল বারী হেলাল। বগুড়ায় নজরুল ইসলাম খান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নওগাঁয় এবিএম মোশাররফ হোসেন, রাজশাহীতে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, সিরাজগঞ্জে অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার ও জয়নুল হক।
অধ্যাপক জয়নাল আবদীন সিলেট বিভাগের অধীনে সুনামগঞ্জে ভিপি, সিলেটে ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, মৌলভীবাজার মীর মো. নাসির উদ্দিন ও হবিগঞ্জের অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। বরগুনা বিভাগে কর্নেল (অব.) এম এ লতিফ খান, পটুয়াখালীতে হাবিব উন নবী খান সোহেল, ভোলায় আবদুল হাই সিকদার, বরিশাল উত্তরে আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং ঝালকাঠিতে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার এবং পিরোজপুরে অ্যাডভোকেট মো. ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ীতে অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, মাদারীপুরে শ্যামা ওবায়েদ এবং শরীয়তপুরে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম। তবে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তাদের এই কর্মসূচীতে যাতে কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য সারাদেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে পারে সরকার। লিফলেট বিতরণ, হাটসভা/পাঠসভা বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। বিএনপি নিজেদের ভিতকে শক্ত করতে এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে সর্ব সাধারণকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি।