Thursday , September 19 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বৃহত্তর রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের পরিকল্পনা, সময় নির্ধারন বিএনপির

বৃহত্তর রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের পরিকল্পনা, সময় নির্ধারন বিএনপির

১২ তম সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার লক্ষ্যে বিএনপি ও অন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবধ্য করে নতুন বাজনৈতিক মোর্চা তৈরিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে যাবেনা বিএনপি। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন গঠনে কোন নাম দেয়নি সার্চ কমিটিকে বিএনপি। সরকার বিরোধী সকল বাম-ডান ও ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করতে চায় বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে এই জোট তৈরিতে মনযোগী বিএনপি।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্দলীয় সরকারের নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সেই দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী প্রায় সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গঠনে বেশি মনোযোগী দলটি। বিশেষ করে বাম ব্লকের দলগুলোর মধ্যে এই নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের কাজ চলছে। এ জন্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করছে বিএনপি। এসব বৈঠকে ওই দলগুলো বিভিন্ন প্রস্তাব রাখছে। প্রতিটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির হাইকমান্ড এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে জোটের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করবে, যা মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে। তবে সরকারবিরোধী বেশির ভাগ দলই জোটের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের পক্ষে। সেক্ষেত্রে জোট নয়, যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে আটকে রাখতে চায় বিএনপি। তবে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত থাকলে অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনো আপত্তি থাকবে না বলে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, এরই মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এলডিপি সভাপতির বাসায় যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর দুই পক্ষের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্বের অবসান ঘটে।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের বাসায় আসেন বিএনপি মহাসচিবসহ কয়েকজন নেতা। আমিও সেখানে ছিলাম। তাদের সঙ্গে দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকার তাদের দাবি বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। বরং এখনই জাতীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করা উচিত। আওয়ামী লীগ সরকার গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দলাদলি করেছে। তাই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বাস্তবায়ন হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাই সবার আগে এসব প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এর জন্য জাতীয় সরকার প্রয়োজন। তবে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্ম্যাট নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেন, চলমান দুর্দশা শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীদের নয়, সারাদেশকে ব্যথিত করছে। জনগণের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে সকল নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। এরই মধ্যে অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে, আমরা শিগগিরই সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করব।

এর আগে শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও দক্ষিণের সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। বৈঠকে দুই নেতা আগামী আন্দোলন, নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সারাদেশে নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতিতে মামলা, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় দলাদলি নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রায় ১০ দিন আগে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপি নেতারা। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে আন্দোলনের কথা বলেছেন ড. এখন পর্যন্ত অবশ্য আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি, বাম জোটের অন্য দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করেনি বিএনপি। এসব দলের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের জোটের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।

এছাড়া বিএনপি নেতারা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও বৈঠকের তারিখ ঠিক হয়নি। দলটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপিও গণফোরামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এসব দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে এলেই বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। এসব দল ছাড়াও গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্রসংস্কর আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ এবং ডান ও বামসহ ২০টি জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছে বিএনপি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ দলই বিএনপির সঙ্গে জোট না করে একযোগে আন্দোলনের কথা বলছে। বিশেষ করে বামপন্থী দলগুলো এর জন্য জোর দিচ্ছে। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তাদের বৈঠক হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসব দলের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। তারা বলেন, আন্দোলন চলাকালে জোট গঠনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে। এটা কোনো নির্বাচনী জোট নয়। এরপরও তারা তাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। তারা কোনো দলকে ক্ষমতায় আনতে জোট করতে রাজি নয়। আগামীতে যেই ক্ষমতায় আসুক তাকে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। এ জন্য কয়েকটি বিষয়ে বিএনপিকে স্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদে পরিবর্তন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং দুদক-নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষপাতমূলক হতে পারে না। এরকম আরও বেশ কিছু বিষয়কে শর্ত দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বৃহত্তর রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আরো আলোচনা হবে। এসব আলোচনায় আমরা ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। সব মিলিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর নতুন জোটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।

আগামী সপ্তাহ থেকে বিএনপির কর্মসূচি: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আরেকটি কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী সপ্তাহ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও দাম কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে দলটি সারাদেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবাদ সমাবেশ, টুপি সভা এবং হ্যান্ডবিল বিতরণ করবে। বুধবার দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডক্টর আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সভায় বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের প্রভাত মিছিল ও শ্রদ্ধা নিবেদনকালে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। . বৈঠক মনে করে, আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একুশের চেতনাকে বিভ্রান্ত করে তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। তারা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের নিন্দা জানিয়ে এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

বৈঠকে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে সম্প্রতি বরখাস্ত করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় মনে করা হয়, একজন সৎ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে দুদকের সব কর্মকর্তা নিজেরাই দুর্নীতিতে লিপ্ত এবং বিরোধী দলকে দমনে সরকারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। কক্সবাজারে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ায় শরীফ উদ্দিনকে বরখাস্ত হতে হয়। বিএনপি অবিলম্বে এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার ও শরীফ উদ্দিনকে পুনর্বহাল করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এছাড়া আগামী মার্চে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। বৈঠকে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত পাঠ ও অনুমোদন করা হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায় বিএনপি। বিএনপি বলে যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোন ভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বিগত যে সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোতে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, বলে দাবি বিএনপির। এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন কারার দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে জোট বাঁধতে মনযোগী বিএনপি।

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *