বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। এই বন্ধন দ্বারা একটি ছেলে ও একটি মেয়ের চারহাত এক হয়। তারা সারা জীবন এক সাথে থাকার অঙ্গিকার নিয়ে তাদের জীবন সংগ্রাম শুরু করে থাকে। এটাতো স্বাভাবিক, তবে যদি একটা ছেলে (পুরুষ) যদি ১৯টি বা ততোধিক বিয়ে করে, তবে সে বিষয়টি আমাদের সমাজে হয়ে যায় অস্বাভাবিক। সাধারনত আমাদের সমাজে পুরুষদের তেমন একটা একাধিক বিয়ে করতে দেখা যায় না। কিন্তু একজন পাগল ঘটালেন ভিন্ন কান্ড, যেটা নিয়ে এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। ঐ মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল) নাম নুর ইসলাম ওরুফে নুরা-পাগলা।
নুর ইসলামের প্রথম স্ত্রী হাজেরা খাতুন প্রায় দেড় যুগ আগে মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে তিনিও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর থেকে তিনি হয়ে ওঠেন নুরা পাগলা
পাগল হয়ে আবার সংসার শুরু করবেন বলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। সেটাও টেকেনি। এভাবে একে একে তিনি আরো ১৯ জন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে বিয়ে করেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ জন নুরা পাগলকে ছেড়ে চলে গেছেন।
এরপর থেকে সে তার স্ত্রী হারানোর ভয়ে শিকল বা মোটা দড়ি দিয়ে শরীরে বেঁধে ১৯তম স্ত্রীরকে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করতেন।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বৈতকান্দি ইউনিয়নের ধরকপুর উত্তরপাড়া গ্রামের ৭০ বছর বয়সী নুর ইসলামের বাড়ি। তার ১৯তম স্ত্রীর নাম জান্নাত বেগম। ৩৫ বছর বয়সী জান্নাতও মানসিক প্রতিবন্ধী।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, নূর ইসলামের প্রথম স্ত্রীর নাম হাজেরা খাতুন। এক ছেলে শেখ চান ও এক মেয়ে মুন্নি আক্তারকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল তাদের। প্রায় ১৫ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান হাজেরা খাতুন। এরপর নুর ইসলাম তার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেন। কিন্তু কিছুদিন পর স্বামী মারা গেলে তিনি নূরের কাছে ফিরে আসেন। একমাত্র ছেলে কয়েক বছর আগে মারা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, নুর ইসলাম তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে বেশ কয়েকজন মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই তার সাথে সংসার করেনি।
বছর খানেক আগে ফুলপুর পৌরসভার আমুকান্দা বাজারে জান্নাত নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে সংসার শুরু করেন নুর ইসলাম। এরপর থেকে নুর জান্নাতকে হারানোর ভয়ে কোমরে শিকল বা দড়ি বেঁধে ভিক্ষা করতেন।
নুর ইসলামের ভাবি রাশিদা জানান, এক বছর আগে জান্নাতের সঙ্গে নূর ইসলামের পরিচয় হয়। পরে জান্নাতকে তার বাড়িতে নিয়ে গেলে এলাকার লোকজন দুজনের মতামত নিয়ে তাকে বিয়ে দেন।
তিনি আরও জানান, নুর ইসলাম তার দুই শতাংশ জমির পাশে একটি ঝুপড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। কলা পাতা, পান, চিড়া, বস্তা ও সংগ্রহ করা পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরি করেন নূর।কিছু মানসিক সমস্যা থাকলেও জান্নাত ঠান্ডা প্রকৃতির।তিনি রান্নাবান্নাসহ স্বামীর দেখাশোনা করেন।
নূরের বড় বোন আমেনা বলেন, “প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমার ভাই পাগল হয়ে যায়। টাকার অভাবে কখনো চিকিৎসা করায়নি। বিভিন্ন সময়ে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে বিয়ে করে খাবারের জন্য ভিক্ষা করে।
নুর ইসলাম বলেন, দড়ি খুলে দিলে আগের স্ত্রীদের মতো যে কোনো সময় জান্নাত উধাও হয়ে যেতে পারে।পরে তাকে খুঁজে পাবনা বলেই এভাবে নিজের সঙ্গে বেঁধে সারাদিন ভিক্ষা করেছি। আমার ঘরটা ভাঙাচোরা, অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। বৃষ্টি হলেই বুকে পানি পড়ে। সরকার আমাদের ভাতা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াইতকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ সংবাদ গন মাধ্যমকে বলেন, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর নুর ইসলাম নিজেও কিছু মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এরপর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।
তিনি জানান, ভিক্ষুক নুর ইসলামের বয়স এখন অনেক। তাকে একটি বাড়ির জন্য আবেদন করতে হবে।বরাদ্দ পেলে তাকে একটি বাড়ি দেওয়া হবে। তারা যাতে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে নজর রাখছি।
নুর পাগলার বহুবিবাহের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট পর দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে তিনি বর্তমানে একজন আলোচিত ব্যক্তি। ঐ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ তার বয়সের দিক বিবেচনা করে একটি ভালো পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। নুরা-পাগলা একটি ভালো বসবাসে জায়গা পান এমনই আশা প্রকাশ করছেন ঐ এলাকার বাসিন্দারা।