Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পাচ্ছেন না সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি, কলেজে ভর্তি আটকে গেল ইমরানের

পাচ্ছেন না সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি, কলেজে ভর্তি আটকে গেল ইমরানের

পিতৃপরিচয় জটিলতার কারণে শিক্ষাজীবন বন্ধ হওয়ার উপক্রম ইমরানের। পিতার দ্বারে ঘুরেও মিলছে না পিতৃপরিচয়। এলাকাবাসীসহ সবাই ইমরানের পিতার পরিচয় জানলেও তিনি তার পিতার কাছে গেলেও পিতার পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন পিতা। অসহায় ঐ যুবকের পিতা আরো বলেন, বিশ বছর আগে যেমন ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করেছিলেন। বর্তমানেও তার সংসার ও সম্পদের দিকে সেই কুচক্রী ষড়যন্ত্র মহল আবার নজর দিয়েছে।

ইমরান হোসেনের বয়স তখন মাত্র ১২ মাস। পরিবারে বাবা-মায়ের মধ্যে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকত। কয়েকদিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ হয়ে গেল। জন্মের কয়েক মাসেই বাবার সান্নিধ্য পান ইমরান। বিচ্ছেদের কারণে ইমরান তার মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন বাড়িতে থাকে। দেড় বছর পর ইমরানের মাকে বিয়ে দেওয়া হয়। আড়াই বছর বয়সে মায়ের সান্নিধ্যও হারান ইমরান। বাবা-মায়ের তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন বাড়িতে বড় হয়েছেন ইমরান। কৃষক দাদার অভাব। নতুন সদস্যদের আগমনের সাথে খরচ বৃদ্ধি পায়। ইমরান তার দরিদ্র দাদার ওপর চাপ কমাতে অল্প বয়সেই খামারে কাজ শুরু করেন। এছাড়া গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও অদম্য ইচ্ছা ও নিরলস প্রচেষ্টায় এ বছর এসএসসি পাস করেছে ইমরান। কিন্তু এইচএসসিতে ভর্তির আবেদনে বাধা রয়েছে। বাবার স্বীকৃতি ইমরানের উচ্চশিক্ষার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তার জন্ম সনদ জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছে কলেজ। জন্ম সনদ নিতে গেলে জানতে পারেন বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার। বাবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি চাইতে গেলে বাবা ইমরানকে ছেলে বলে অস্বীকার করেন। সে তাকে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। ইমরান এখন তার পৈত্রিক পরিচয় উপলব্ধি করতে ইউএনও, স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুসরণ করছেন। ইমরানের নানাবাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত কাউরিয়া গ্রামে। তিনি নানা আলী আকবর কাজীর পরিবারে বড় হয়েছেন। ইমরানের বয়স এখন প্রায় ২০ বছর। জেএসসি ও মাধ্যমিকের সনদে দলিলুর রহমানের বাবার নাম উল্লেখ রয়েছে। সে একই গ্রামের গফুর সরদারের ছেলে।

নানার বাড়ি থেকে দলিলুর রহমানের বাড়ির দূরত্ব ৩০ মিনিট। এত কাছে থেকেও তাকে বাবা বা আদরের বাবা বলে ডাকা তার ভাগ্যে জুটেনি। ইমরানের দাদা আলী আকবর কাজী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে তার মেয়ে আকলিমার সঙ্গে একই গ্রামের আব্দুল গফুর সরদারের ছেলে দলিলুর বিয়ে হয়। কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। বিয়ের দেড় বছর পর আকলিমাকে তালাক দেন দলিলুর। এরপর থেকে ইমরান ও তার আকলিমা তার সঙ্গেই আছেন। আর্থিক অনটন ও আকলিমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আলমগীর নামে শরীয়তপুরের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

আকলিমা বর্তমানে তার স্বামীর সাথে মরিশাসে রয়েছেন। তিনি বলেন ১২ মাস বয়স থেকেই ইমরান তার কাছে বড় হয়েছে। এসএসসি পাস। আকলিমার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দলিলুর একবারের জন্যও ইমরানের খবর নেননি। পড়াশোনায় ইমরানের প্রবল আগ্রহ। দলিলুর এখন কলেজে ভর্তি হতে একটি পরিচয়পত্র প্রয়োজন কিন্তু দলিলুর তা দিতে অস্বীকার করছে। তাই ইমরানের পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিষয়টি গ্রামের বিভিন্ন মানুষকে জানিয়েছি। তবে সমাধান হয়নি। গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দার মতে, গ্রামের সবাই জানে ইমরান দলিলুর ছেলে। কিন্তু দলিলুর ইমরানকে চিনতে পারছেন না। ইমরান বলেন, বাবা-মায়ের আদর কী তা বলতে পারব না। কিন্তু তাদের প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই। আমি আমার দাদার পরিবারে বড় হয়েছি। নানা বৃদ্ধ। এখন কাজ করা যাবে না। তাই লেখা-পড়া শিখে চাকরি পেলে দাদাকে আর আমার খরচ বহন করতে হবে না।

উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য ঢাকার সাভারের আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান কলেজে আবেদন করেছি। কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে জন্ম সনদ জমা দিতে হবে। জন্ম সনদ নিতে গিয়ে জানতে পারলাম আমার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। সে তার বাবার (দলিলুর রহমান) কাছে পরিচয়পত্রের ফটোকপি চাইলে সে দুর্ব্যবহার করে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর ইউএনও, স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করছি। কিন্তু লাভ নেই। ইমরান আরও বলেন, আমি অনেকবার আমার বাবা ও দাদার কাছে রাস্তায় ভিক্ষা করেছি। কিন্তু তাদের মন গলেনি। আমি আমার বাবার কাছে সাহায্য চাইতে চাই না।

তিনি আমাকে বৈধভাবে চিনবেন, আমি এটাই চাই। গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার জয়নাল হোসেন জানান, গ্রামের প্রায় সবাই জানে ইমরান দলিলুর রহমানের ছেলে। পরিস্থিতির মুখে ২০ বছর আগে আকলিমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি। দেড় বছর ধরে তারা একসঙ্গে সংসার করেছেন। জয়নাল হোসেন জানান, ইমরানের সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি (জয়নাল) এনআইডির ফটোকপির জন্য দলিলুর রহমানের কাছে যান। দলিলুর তাকে ধোঁকা দিয়ে বলেন, “আমি একটি শর্তে ফটোকপি দিতে পারি, তার আগে আমাকে লিখিতভাবে ইমরানকে দিতে হবে। সে আমার কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না।” গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহজাহান বলেন, ইমরানের অসহায়ত্ব দেখে আমি নিজেই দলিলুর রহমানের কাছে যাই। যাইহোক, দলিলের কঠোরতা দেখে আমি চলে যেতে বাধ্য হলাম।

ইমরান গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের মৌতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেন বলেন, ইমরানের কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। বিষয়টি আমাকে বিরক্ত করছে। স্কুলে ভর্তি থেকে এসএসসি পাস পর্যন্ত সকল শিক্ষা সনদে বাবার নাম দলিলুর রহমান উল্লেখ আছে। কলেজে ভর্তি হতে চাইলে জন্ম সনদ পেতে দলিলুর রহমানের পরিচয়পত্রের কপি লাগবে। আমি স্কুল থেকে দলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হই। এদিকে দলিলুর রহমান বলেন, ‘আকলিমার চরিত্র ভালো ছিল না।

অন্য কারো সঙ্গে অপকর্মের কারণে ওই শিশুর জন্ম হয়েছে। ওই শিশুটি আমার নয়। ২০ বছর আগে গ্রামের একটি মহল ষড়যন্ত্র করেছিল। পরে হুমকির মুখে অন্তঃসত্ত্বা আকলিমাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। তার সঙ্গে আমার কোনো শারীরিক সম্প’র্ক হয়নি। তার সাথে আমার কখনো সংসার ছিল না। বিয়ের তিন মাস পর আমি তাকে তালাক দিয়েছিলাম। দলিলুর রহমান আরও জানান, ৩ সন্তান নিয়ে তিনি সুখে সংসার করছেন।

জ্বালানি তেলের ব্যবসা তার পরিবারে সচ্ছলতা এনেছে। এলাকায় কিছু জমিও কিনেছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের নজর রয়েছে ওই সম্পদের ওপর। তারা নতুন করে জমি ও টাকা দখলের ষড়যন্ত্র করছে। হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, সম্প্রতি ইমরান আমার কাছে এসে তার ঘটনার কথা জানায়। আমি তখন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধানের জন্য অনুরোধ করি।

চেয়ারম্যান ব্যর্থ হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে দলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছি। ইমরানের উচ্চশিক্ষায় জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কিছু করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন দলিলুর রহমান। এখন পিতৃত্ব ও স্বীকৃতির দাবিতে ইমরানের আইনের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না।

আইনের আশ্রয় নিও পিতার কাছে সন্তানের মর্যাদা পাবে কিনা, এটা নিয়েও চিন্তিত ইমরান। ইমরান এর শিক্ষা জীবন বন্ধ হয়ে যাবে কিনা, সেটাও জানে না।ইমরান জানান আমার শিক্ষা জীবন এখন অনিশ্চতার ভিতর দিয়েই যাচ্ছে।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *