বাংলাদেশে রাজনীতির নামে যে সকল অপকর্ম হয় সে বিষয়ে এবার মুখ খুললেন একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, আগে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে কিন্তু এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। আমার কর্মীরা ও লোকজন সবসময় তৈরি। তার এইসব বক্তব্য নিয়ে বেশ কিছু রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেকটা ক্ষুদ্ধতা দেখা গিয়েছে।
নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী আরো বলেছেন, আমি শেখ হাসিনা-বঙ্গবন্ধুর কর্মী। আমি হাজী ইদ্রিসের ছেলে হয়ে বঙ্গবন্ধুর কোলে বসেছিলাম।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কাদের সাহেব: আমি আপনার কর্মী ছিলাম, এখন নেই। নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) আমার বিরুদ্ধে যতই ভুল বোঝানো হোক না কেন, হাম বহিষ্কার নেহি হোগা (আমাকে বহিষ্কার করা হবে না), আওয়ামী লীগ বি নেহি ছোড়েগা (আওয়ামী লীগ আমি ছাড়ব না), নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার। : আমিও নেত্রী (শেখ হাসিনা)।
সোমবার বিকেলে কবিরহাটের সুন্দলপুরে নিজ বাড়িতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
একরাম চৌধুরী বলেন, সেপ্টেম্বরে ওবায়দুল কাদেরের রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মির্জা (মেয়র কাদের মির্জা) ও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক খায়রুল আনামের সঙ্গে সেলিমের বাকবিতণ্ডা হয়। মজা করে বললেন, ওবি আর নেহি আয়েগা।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে এমপি একরাম চৌধুরী বলেন, আমি অজগর সাপ।আর এই সাপের লেজে পা দেবেন না। আমার ছেলেরা (স্টাফ) এটির জন্য অপেক্ষা করছে।ইশারা দিলেই সাইজ করে ফেলবে।বাড়ি থেকেও বের হতে পারবেন না। আমি গত দুই মাসে কিছু বলিনি, তবে আমি বসে থাকব না।
জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি খায়রুল আনাম সেলিম ও অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের উদ্দেশে তিনি বলেন, কে কিভাবে বড়লোক হলো আমি সব জানি। সময় হলে সব বলবো। যাইহোক, কোনও প্রতিপক্ষ স্বর্ণযুগে প্রবেশ করতে না পারে।সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখবেন এবং প্রতিহত করবেন। এসব নেতা মোটরসাইকেল, বিলাসবহুল গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন। তারা নিয়োগ বাণিজ্য, লু’টপাট, দখল বাণিজ্য করেছে। এমনকি ১০০ টাকার একজন আইনজীবী এখন ৫ হাজার টাকার কথা বলে। তারা যে সম্পদে পরিণত হয়েছে তার উৎস কোথায়?
তিনি বলেন, আমি ব্যবসা করি। আমি রাজনীতি করে টাকা আয় করি না। আমার সাথে খেলো না। ২০০১ সালে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ওবায়দুল কাদের বুঝেছেন। আমি কি জিনিস এবং কি ধরনের খেলোয়াড়।আমাকে নড়াচড়া করবেন না, আমিও কম জেদি নই।
একরাম চৌধুরী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম সেলিম মাইজদী শহরে তিনটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। আমি সদরের এমপি কিন্তু নোয়াখালী শহরে আমার এক টুকরো জমিও নেই। তিনি আমাকে টিজ করেন এবং সুড়সুড়ি দেন। সে ভুলে গেছে: সেলিম সাহেব আমাকে সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে নিয়ে গেলেন ঢাকা শহরের একটা জায়গা দখল করতে-লবি করতে। সেলিম সাহেব এখন সে সব ইতিহাস ভুলে গেছেন। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ইউপি চেয়ারম্যান, একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান, দলীয় সভাপতি থাকা সত্ত্বেও সুবর্ণচরের মানুষের জন্য কিছুই করতে পারেননি তিনি। তারা আমাকে নেতা মনে করে। তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান করার জন্য আমি নেতাকর্মীদের হাতে পায়ে ধরেছি। দেড় কোটি টাকা খরচ করে তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান করেছি।
তিনি এখন উপনির্বাচনে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এমপি হবেন, মার্কা নৌকা আনলেও সুবর্ণচরের মানুষ আমার, আমি আপনাকে ছাড় দেব না।
এর আগে একরাম চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়। পরে পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করার অভিযোগে তাকে পদ থেকে সরিয়ে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশসহ কেন্দ্রে চিঠি দেয় নোয়াখালী জেলা আহ্বায়ক কমিটি।
যেসকল নেতাকর্মীরা দেশের মানুষের সেবার নামে এসব অপকর্ম চালায় তাদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও তার সমালোচক। তারা আরো অভিযোগ করেছেন, একরাম চৌধুরী বাংলা ভাষার অবমাননা করে তার বক্তব্যে হিন্দি ভাষার প্রয়োগ করেছেন। আর এই বিষয়টাকে ভাষার অপমান বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকজন নেটিজন।