মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ জয় বাংলাকে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন এবং সব অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে হবে, এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন যে, বর্তমান সরকার ‘জয় বাংলা’ বলার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।
তিনি বলেন, যারা বিচ্ছিন্নতাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে বিপন্ন করেছে তারাই জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছে। বৈষম্য, শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাঙালির সংগ্রামী চেতনার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতিনিয়ত একটি পরিবারের কাছে বলিদান হচ্ছে। সোমবার মিরপুর থানার বিভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর জেএসডিতে যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আ স ম আবদুর রব এ কথা বলেন।
আ স ম রব বলেন, দলটির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সরকার চতুরতার সাথে ঐতিহাসিক সব অর্জন আত্মসাৎ করছে। যারা জনগণের ভোটাধিকার, মৌলিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশকে দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তাদের পতন ত্বরান্বিত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতে হবে। আ স ম রব স্মরণ করেন, সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে নিউক্লিয়াসের দুই সদস্য এবং ছাত্রলীগ নেতা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও চিশতি শাহ হেলালুর রহমান ১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মধুর ক্যান্টিনে প্রথম বাঙালির মাটিতে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তোমারই আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা, ধরো বীর বাঙালি অ’স্ত্র- বাংলাদেশ স্বাধীন করো, স্বাধীন করো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো, তুমি কে? আমি কে বাঙ্গালী- বাঙালী, পিন্ডি নাকি ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা। এই স্লোগানগুলোও নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে গৃহীত হয়। এই স্লোগানগুলো ছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালির প্রাণ, স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ ‘জয়বাংলা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে এবং ছাত্রদের নিয়ে ‘জয়বাংলা বাহিনী’ গঠন করে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে এবং নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের নেতা-সংগঠকদের অনন্য লড়াকু ভূমিকাকে অস্বীকার করে বর্তমান সরকার ব্যক্তি ও পারিবারিক ইতিহাস প্রতিষ্ঠার এক অদ্ভুত নতুন বক্তব্য তুলে ধরছে। শাসকের বক্তব্য ইতিহাস গড়ার উপাদান জোগায় না, এটাই বর্তমান সরকারের ন্যূনতম শিক্ষা নয়।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে অগনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাকে আকড়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন মৌলিক প্রতিষ্ঠানে দলীয় করন করার উদ্দেশ্যে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। এটি সরকারের পারিবারিক ইতিহাসের পুনরুত্থানের একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে স্লোগানটির মাধ্যমে। অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে জয় বাংলা স্লোগান অনুপ্রেরনা হিসেবে কাজ করে। তবে এখনকার প্রেক্ষাপটে সেই দৃশ্য সম্পুর্নই ভিন্ন। বর্তমানে যারা দেশে নানা ধরনের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকে দেশকে বিপথের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারাই জয় বাংলা স্লোগান বেশি ব্যাবহার করছেন বলে মন্তব্য করেন আ স ম আবদুর রব।