হিপহপ শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে নিউইয়র্ক সিটির সাউথ ব্রনক্স এলাকায়। হিপ হপের অপর রুপ বলতে যেটা বোঝায় সেটা হলো র্যাপ গান। বিশ্বে প্রচলিত গানগুলোর মধ্যে অন্যতম গানগুলো হলো এই র্যাপ গান। আর গানটির মাধ্যমে শ্রোতাদের উল্লাস ও বিনোদন যেন একটু বেশি হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাসীর সামনে এসেছে পাকিস্তানে বোরকা পরে র্যাপ গান করা একজন নারী শিল্পী। র্যাপ গান, তাও আবার বোরকা পরে, এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। কারণ বোরকা পরিহিত এই নারী শিল্পী নিজের র্যাপ গানের মাধ্যমে শ্রোতাদের মনে ফেলেছেন ব্যাপক সাড়া।
হিপ হপ বা র্যাপ আর্টিস্ট মানে কানের দুল, নেকলেস, টি-শার্ট, ট্র্যাকসুট, স্নিকার, হাতের আংটি। দীর্ঘদিনের এই প্রবণতা ভেঙে নতুন লুকে এসেছেন পাকিস্তানি নারী র্যাপার ‘ইভা বি’। কারণ এসবের তোয়াক্কা না করে বোরকা পরে তিনি র্যাপ গান গেয়ে বিশ্বকে মোহিত করেছেন; যা এখন বেশ ভাইরাল।
২০১৪ সালে গান শুরু করেন ইভা। কিন্তু সমাজের মানুষের সমালোচনা শুনে গান গাওয়া বন্ধ করে দেন এই শিল্পী। বিরতি ভেঙে আবার গান শুরু করেন তিনি। তবে তার ভাই শর্ত দিয়েছেন। বোরকা পরে গাইতে হবে সেই গান। আর সেই শর্ত অনুযায়ী গানে ফিরেছেন ইভা।
কোক স্টুডিও সম্প্রতি ‘কানা ইয়ারি’ শিরোনামের একটি গান তৈরি করেছে। আর এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ইভা। গানটি নিয়ে ভিডিও করা হয়েছে। গানটি কোক স্টুডিওর ইউটিউব চ্যানেলে ১৯ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। তার মুক্তির পর, ইভা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন। এখন পর্যন্ত, গানটি ইউটিউবে ১৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইভা একটি কম্পিউটার ফোল্ডারে আমেরিকান র্যাপার এমিনেমের গান খুঁজে পান। ইভা যখন এই র্যাপারের গানটি শুনেছিল, তখন সে জানত এটি কী ধরনের গান। তিনি এই ছন্দময় গান পছন্দ করেন; ‘ইভা বি’ এর তখন থেকেই র্যাপ গানের সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বেলুচ উপজাতির প্রথম র্যাপ গায়িকা ‘ইভা বি’।
‘ইভা বি’ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি মিডিয়া আউটলেট দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন: “আমি চেয়েছিলাম যে লোকেরা আমার গল্প এবং লিয়ারির মহিলার গল্প আমার র্যাপ গানের মাধ্যমে শুনুক।”
আমি এমন একটি জায়গা থেকে এসেছি যেখানে মাত্র কয়েকটি মেয়ে কাজ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং মেয়েটি র্যাপ গান গায় আমার সমাজ সম্মানের চোখে দেখে না। এবং আমি সেটাকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছিলাম। ” তার মা তার গাওয়া র্যাপকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু প্রথমে ইভার ভাই এটা মেনে নিতে পারেননি। কারণ তার বন্ধুরা তাকে এ নিয়ে উত্যক্ত করত। যখনই ইভা ইউটিউবে একটি র্যাপ গান আপলোড করত, তখনই সে তার ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ত। প্রতিবেশীরা আসত এবং আমার ভাই আমাকে বকাবকি করত; যা লড়াইয়ের পর্যায়ে চলে যেত। যদিও ইভার ভাই পরে তাকে বোরকা পরে র্যাপ গাওয়ার অনুমতি দেন। তবে ইভা বোরকা পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। জনপ্রিয় এই গায়িকা বলেন, আমি বোরকা না পরলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না বা ভালো অভিনয় করতে পারি না। বোরকা শুধু আমার মুখ ঢেকে রাখে না; এটা আমার প্রতিভার আবরণ।
অদম্য ‘ইভা বি’ তার সপ্ন পুরনের কথায় বলেন, “র্যাপ গান করার ইচ্ছা তার প্রবল, তাই বিষয়টি তার পরিবারকে তিনি জানান। প্রথম দিকে তার মা রাজি থাকলেও, রাজি ছিল না তার ভাই। এক সময় তার ভাই তাকে উৎসাহিত করেন এবং তিনিই ‘ইভা বি’ কে বোরকা পড়ে র্যাপ গান করার ধারণাটি দেন।