গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে সংবাদ মাধ্যমে ভাইরাল হয় সোহেল-রওশন দম্পতি। ভালোবাসা কিংবা প্রেমের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এই দম্পতি। ভালোবাসা দিবসে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঘুরতে গিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। তাই নিজ পায়ে চলাচলে অক্ষম স্ত্রীকে পিঠে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন স্বামী সোহেল। স্বামীর পিঠে স্ত্রী, এমন দৃশ্য দেখে কোন এক অজ্ঞাত ব্যক্তি সেই চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে এবং মূহুর্তেই সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু সোহেলের আগে আরও একটি সংসার রয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক গণমাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সোহেল মিয়ার ১৫ বছরের পরিবারের প্রতিবন্ধী স্ত্রী রওশন আক্তারকে পিঠে নিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে সারা দেশের মানুষ মুগ্ধ হয়েছিল। সামাজিক গন ম্যাধমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। মানুষ যখন মুদ্রার পিঠ দেখে সোহেলেরসোহেলের তারিফে মেতে উঠে, তখনই সোহেলের আগের বিয়ের কথা সামনে আসে। শুধু তাই নয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে সব বিষয়েই মিথ্যা বলেছেন সোহেল! আর তাতেই বদলে গেছে পরিস্থিতি। সোহেলের স্ত্রী রওশন এখন পরিবারকে সমর্থন করার জন্য স্বীকৃতির পরিবর্তে সাহায্য চাইছেন। মিডিয়ার কাছে অনুরোধ, দয়া করে আমার সাজানো সংসারে কেউ কাটা হবেন না, সংসারটি ভাঙবেন না।
তাদের প্রেম শুরু হয় ১০ টাকার নোটে পাওয়া নম্বর থেকে। পরিবারের সম্মতি ছাড়াই ২০০৭ সালে বিয়ে করেন রওশন ও সোহেল। তারপর ১৫ বছর কেটে গেছে। তাদের ভালোবাসার ছোট্ট ঘরটি আলোকিত করেছে একটি ছোট্ট মেয়ে।
তাদের অদম্য ভালোবাসার গল্প গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পেয়ে সোহেল-রওশন প্রেমের গল্প শুনতে ও তাদের জীবনের সমস্যা দেখতে তাদের বাড়িতে যান আখতারুজ্জামান। তিনি তাদের জীবিকার জন্য বাসস্থান, দোকান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে নতুন তথ্য সোহেলের বিয়ে হয়েছে ১৬ বছর আগে।
জানা গেছে, সোহেল এর আগেও বিয়ে করেছে। তিনি স্ত্রী শুরাতন বেগম ও চার সন্তান রেখে গেছেন। ১৯৯২ সালে তাদের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহ ও ঋণের কথা কাউকে না বলে ২০০৫ সালে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় সোহেল। আর ফেরেননি, আলাদা করেননি। স্ত্রী এতদিন জানতেন যে তার স্বামী হারিয়ে গেছে। তাই থানায় অনুসন্ধান বা জিডি করার প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি।
এতদিন পর যখন রওশন ও সোহেলের প্রেমের বিজ্ঞাপন মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে, তখনই স্বামীকে চিনতে পারেন শুরাতন। তবে এখন তিনি বলেছেন যে তিনি তার স্বামীকে ফিরে চান না। সোহেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করা তো দূরের কথা, সে মূলত অষ্টম শ্রেণি পাস করেছে বলে জানান শুরাতন। তিনি আরও দাবি করেন, সোহেলের আসল নাম বকুল।
হঠাৎ করেই পরিচিতদের জগৎ আমূল বদলে গেছে। প্রতিবন্ধী রওশন বলেন, সোহেলের আগের বিয়ের বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এখন আমার সংসার ভাঙার পথে।
“সে আমাকে ভালোবাসে, এটা মিথ্যা নয়,। তিনি ১৫ বছর ধরে আমার মতো একজন অসুস্থ ব্যক্তির সাথে বসবাস করছেন। আমি আমার ভালবাসা দিয়ে তাকে জয় করেছি। তিনি হাত জোড় করে বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ। আমি প্রতিবন্ধী, আমি তোমাদের মতো সুস্থ নই। আমার স্বামী প্রতারণা করছে বা না করছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
সোহেলের সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে রাজি রওশন। তিনি বলেন চাইলে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে পারি। কিন্তু এই ১৫-১৬ বছর ধরে তারা তার খোঁজ নেয়নি,এবং কোন জিডি করেনি। রওশন গণমাধ্যম কর্মীদেরও এ বিষয়ে আর কিছু প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী সোহেল ও রওশন দম্পতিকে বাড়ি প্রদান ও আর্থিক সাহায্য করেছেন এই কথা জানার পর সোহেলের পূর্বের স্ত্রীর নজরে আসে বিষয়টি। এরপরই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন রওশন। কিন্তু সোহেলের পূর্বের বিয়ে নিয়ে তার নিজ মুখ থেকে কোন তথ্য প্রকাশ পায়নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা গনমাধ্যমে। সোহেলের পূর্বে সংসার ছিল এমন বিষয়টি সামনে আসার পর সেটা কতটুকু সত্য সেটা নিয়েও নেটিজেনদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে বিষয়টি সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ঐ প্রতিবন্ধী স্ত্রী।