Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / opinion / ২ মাস আগে বলেছিলাম, সরকার বুঝালো আমাদের দাবিতে আইন করে দিলো: ড. শাহদীন

২ মাস আগে বলেছিলাম, সরকার বুঝালো আমাদের দাবিতে আইন করে দিলো: ড. শাহদীন

দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সামালোচনা বিরাজ করছে। দেশ স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত কোন আইন প্রনয় হয়নি। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এই নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রনয়নের পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। ইতিমধ্যে এই বিষটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। তবে এই নিয়ে বেশ কিছু কথা বললেন বিশ্লেষকরা।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়া স্বল্প মেয়াদে অনুমোদন এবং আইনটি সংসদে পাসের পেছনে বিভিন্ন কারণ দেখছেন সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, খসড়া আইনে সুশীল সমাজের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। আইনে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে যা সংবিধানের সঙ্গে সাং/ঘ/র্ষি/ক। এই আইনে যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করা হবে, তারা আগের ২টি নির্বাচন কমিশনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন পরিচালনা করবে। মূলত বর্তমান সরকার ক্ষমতায় ফেরার জন্য নির্বাচন কমিশনকে পছন্দের লোক দিয়ে সাজাতে এই ত্রুটিপূর্ণ আইন পাস করছে। রোববার সিটিজেনস ফর গুড গভর্নেন্স (সুজন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট নাগরিকরা এ কথা বলেন। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ‘প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন: নাগরিক চিন্তা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত খসড়া আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম জানার সুযোগ নেই। এতে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো, এ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের পরামর্শ ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতির কাছে গেলে সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো গ্রহণ করা উচিত ছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে আইনটি সংসদে তোলা হচ্ছে। এতে করে আইন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমান সরকার কী ধরনের অনুসন্ধান করবে তা অনুমেয়। তারা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ খুঁজে পাবে। রাষ্ট্রপতি দুজন নাগরিককে মনোনয়ন দেবেন। হঠাৎ করে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা কীভাবে এলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো ১০ জনের নাম আমরা জানি না। শীঘ্রই আবার দেখা হবে। ৫ জনের নামে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। ডক্টর শাহদীন মালিক বলেন, বিশ্বজুড়ে স্বৈরাচারী সরকারের বৈশিষ্ট্য হলো তারা এমনভাবে নির্বাচন করে যাতে তারা জয়ী হয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে পছন্দের নির্বাচন কমিশন গঠন করা। এ আইনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে যে খেলা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামী নির্বাচনে সরকারি দলই জিতবে। তিনি সন্দিহান যে বর্তমান সরকারের জয় নিশ্চিত করতে আইন করা হচ্ছে। প্রতারণার পথ বেছে নিয়েছে এই আইন। আমরা দুই মাস আগে আইন প্রণয়নের কথা বলেছি। সরকার ব্যাখ্যা করেছে যে তারা আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো লোক দেখানো আইন হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য ছিল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করা। উল্টো সরকার সেই আইনকে অ/স্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। সরকার ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচন কমিশন আইনকে অ/স্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। সুজন সম্পাদক মো. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলেও বিতর্কিত নির্বাচন ঠেকাতে পারে। নির্বাচন চলমান অবস্থায় ব্যবস্থা নিতে পারে। তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়া তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সরকার। রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের কাছ থেকে নাম খোঁজা হচ্ছে কি? প্রশ্ন করলেন তিনি।

ড. মজুমদার আরও বলেন, সরকার কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই তাদের মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন করেছে। বক্তব্য রাখেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি মোঃ আব্দুল মতিন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ। সুজনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, সুজনের প্রস্তাবিত অভিনয় সময়সাপেক্ষ; তাই খসড়ায় কমিটির কার্য সম্পাদনের জন্য ১-২ মাস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের খসড়ায় মাত্র দশ কার্যদিবস আছে, তাই এত কম সময়ে কমিটি কীভাবে অনুসন্ধান ও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালাবে তা আমরা বুঝতে পারছি না। সরকারের প্রস্তাবিত খসড়ায় গবেষণা কার্যক্রম রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নাম চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

সুজনের প্রস্তাবিত খসড়ায় কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে কমিশনের সবচেয়ে সিনিয়র কমিশনারকে পরবর্তী প্রধান কমিশনার হিসেবে নিয়োগের কথা বলা হলেও, সরকারের খসড়া তদন্ত কমিটি দ্বারা গঠিত কমিশনের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ফাংশন এবং সুপারিশ। বিধান যোগ করা হয়েছে যে করা যাবে না. জনগণকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দায় থেকে জনগণকে রেহাই দিতে আগের দুটি কমিশন এই বিধান করেছে বলে মনে হয়। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় দায়িত্ব না নেওয়া এবং দায়িত্ব থেকে রেহাই পাওয়ার দৃষ্টান্তের এই ধারাবাহিকতা। আমরা যদি গণতন্ত্র ও সুশাসনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়তে চাই, তাহলে আমাদের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি ও শাস্তি না দিয়ে অভিশংসনের এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। লিখিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব বিতর্কমুক্ত রাখতে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে সুশীল সমাজ। . আইন করে পুরনো প্রক্রিয়াকে নতুন মোড় দিলে সে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না, উল্টো আরও বিতর্ক তৈরি হবে। তাই সব পক্ষের মতামত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সময়োপযোগী ও উপযুক্ত আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা কমিশনারদের সময়কাল শেষের পথে। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ রয়েছে তাদের সময়কাল। তবে তাদের মেয়াদ শেষের আগেই নতরুটন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নিরলস ভাবে কজা করে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে তিনি দেশের প্রায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। এবগন তিনি জানিয়েছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।

About

Check Also

আগামীকাল ক্যান্টনম্যান্টে হামলার পরিকল্পনা করেছে আঃলীগ, মিটিংয়ের ভিডিও আসছে: ইলিয়াস হোসেন

ড. বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল শীঘ্রই মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে খুব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *