বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বিএনপি দল। এই দলটি টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের মধ্যে বর্তমান সময়ে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এমনকি দলের তৃনমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই দলীয় নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে। এতে করে এই সকল বিরোধীকারীদের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে বিএনপি। তবে এক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে নতুন দুশ্চিন্তা। এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
২০১৯ সালে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। অতি সম্প্রতি, তালিকায় যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নেতা। এ কারণে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব নেতাকে বহিষ্কারের ফলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। যেহেতু পুরো প্রক্রিয়াটি দলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, তাই কোনও নেতাই ভিতর থেকে বিষয়টি নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করা থেকে বিরত থাকেননি। কমিটি গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাসে বিএনপি তাদের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে সরে দাঁড়িয়েছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। মজিবর রহমান সরোয়ারকে বরিশালে দলীয় কমিটির কোনো পর্যায়ে রাখা হয়নি। কমিটি পুনর্গঠনের প্রতিক্রিয়ায় খুলনার খ্যাতনামা নেতা ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর মুক্তি পান কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। নারায়ণগঞ্জের সুপরিচিত বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি মেয়র নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং পরে প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে মিষ্টি বিনিময়ের দায়ে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত হওয়ার পাশাপাশি কয়েকজন নেতাকে কোণঠাসা করে রেখেছে বিএনপি। এ তালিকায় রয়েছেন রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মুক্তি ও কোণঠাসা করে রাখার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছেন, ‘বিএনপিই তাদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ দেখিয়ে বা তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিলে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে যারা বহিষ্কৃত বা বহিষ্কৃত তারা সবাই সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নেতা। এ কারণে সাংগঠনিক কোনো প্রভাব না থাকলেও রাজনৈতিকভাবে দলেরই ক্ষতি হবে। এরপর পুরো দায়িত্ব যাবে শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর। স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছি। সরকার যেন এসব বিষয়কে খেলার অংশ করে না ফেলে। কারণ, যাদের অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে বা বহিষ্কার করা হচ্ছে বা রাখা হচ্ছে, তাদের সামাজিকভাবে গৃহীত হবে। সেক্ষেত্রে ভয়। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ‘বিএনপি’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বিষয়টি রয়ে গেছে। দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি প্রভাবশালী সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক যেকোনো ইস্যুতে সামনেই বিষয়টি উঠে আসবে। কেবল সময়ই বলে দেবে কী ফ্যাক্টর হবে বা হবে না। কিন্তু সমস্যাগুলোকে কাজে লাগিয়ে ডান দিককে দুর্বল করা যায়।
‘ভুল তথ্য ও শত্রুতা’ ব্যবহার করে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি। বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘মিজানুর রহমান মিনু বা তার অনুসারীদের কাউকে রাজশাহীর নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি। একে পাশে রেখে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক প্রভাবশালী নেতা শীর্ষ নেতৃত্বকে বুঝিয়েছেন। তার ইন্ধনে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন। সিলেটের প্রভাবশালী এক নেতার দৃষ্টিতে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে কোণঠাসা করে রাখার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। আব্দুল মালিকের রাজনীতির কারণে বাবা খন্দকার স্থানীয় প্রভাব অর্জনের জন্য বিএনপিতে এলেও তার স্থানীয় বিরোধিতা দলটিকে এখন প্রশ্নবিদ্ধ ও দুর্বল করে দিয়েছে বলে মনে করেন সিলেটের একাধিক স্থানীয় বিএনপি নেতা। দলটির একাধিক নেতা জানান, বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, উলামা দলসহ নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। বহিষ্কারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি স্বেচ্ছাসেবক দলে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, গত ছয় মাসে খুব বেশি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেনি।দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচনে গেলে যেমন উপজেলা নির্বাচনের কয়েকদিনের মধ্যেই হয়। আগে, অনেকে সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে গিয়েছিল, তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। আবার, অনেককে অব্যাহতি থেকে দলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। গত ছয় মাসে খুব বেশি সিদ্ধান্ত হয়নি।” নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ, “বহিষ্কার ও অব্যাহতির বিষয়ে দলটির আরও জবাবদিহি ও সতর্ক থাকা ভালো। বিশেষ করে ‘চেক ছাড়া চাল’ দিলে রাজনৈতিক হিসেব ভুল হতে পারে। ” দলের আরেক নেতা দাবি করেন, বিএনপিতে নেতাদের একটি অংশ আছে যারা দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা এখন যেভাবে আছে, সেটাই কি মন্দ! সেক্ষেত্রে দলটিকে বহিষ্কারের ব্যাপারে আরও সজাগ থাকতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শনিবার (২২ জানুয়ারি) বলেন, একটি দলের আজীবন নিয়ম-নীতি থাকবে। এটা দলের নিয়মেই আছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কাজ থাকলে তা করবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও (বহিষ্কৃত) হতো। সেজন্য সংবিধানে এগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এটা বরং দলকে শক্তিশালী করছে। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদের কাছে বার্তা যাচ্ছে। ‘
ইতিমধ্যে দলের মধ্যে থাকা বিরোধী নেতাকর্মীরা বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি দল। এমনকি অনেককেই দলীয় পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার-অব্যাহতি প্রদান করেছে। এছাড়াই অনিয়মকারী নেতাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দলটি নিয়েছে নানা ধরেনর পদক্ষেপ। এছাড়াও দলের মধ্যে চলমান সকল সংকট নিরসনের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করছে বিএনপি দল।