গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সমগ্র দেশ জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে ৭ প্রশাসন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এদিকে নতুন করে বেশ বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ১২টি মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাব সদস্যদের নিষিদ্ধের জন্য। তবে এই নিয়ে বেশ কিছু কথা বললেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাব সদস্যদের নিষিদ্ধ করার জন্য ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার চিঠিকে হালকাভাবে নেওয়া হয়নি। তাদের মতে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর চিঠির প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ ছাড়াও ওইসব সংস্থার সঙ্গে কার্যকর আলোচনার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ ১২টি সংস্থার চিঠি একসঙ্গে নিতে চাইলেও তা হালকাভাবে নিতে পারবে না। র্যাব এবং এর ৭ সাবেক বর্তমান কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার এক মাস আগে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এই বাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। চিঠিটি সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের একজন মুখপাত্র শুক্রবার বলেছেন যে মানবাধিকার একটি অগ্রাধিকার এবং চিঠিটি গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশসহ প্রায় ৭ হাজার সৈন্য বিশ্ব শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ র্যাবেও কাজ করেছেন। শান্তিরক্ষা মিশনের মোট খরচের প্রায় ৩০ শতাংশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের প্রভাব প্রবল।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক শাহাব এনাম খান মনে করেন, জাতিসংঘ চাইলেও ১২টি সংস্থার চিঠিকে হালকাভাবে নিতে পারবে না। তিনি বলেন, এত বড় নেটওয়ার্ক তারা বাইপাস করতে পারবে না। এ বিষয়টি উদ্বেগজনক বলেও মনে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, জাতিসংঘ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তদন্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের যদি অবস্থান থাকে, তার সঙ্গে এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হলে তা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে সংগঠনগুলোর আপত্তির কারণগুলো সমাধান করাই এখন সবচেয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অবস্থানের কারণ খতিয়ে দেখারও আহ্বান জানান অধ্যাপক শাহাব এনাম খান। তিনি বলেছেন, কূটনীতিকে দোষারোপ বন্ধের পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমেই সংকটের সমাধান করা যেতে পারে। যদিও সরকার বলে আসছে র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অতিরঞ্জিত।
হঠাৎই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে পতিত হয়ে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশ সরকার সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে নানা বিদ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এবং দেশটির দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহরের লক্ষ্যে কাজ করছে।