প্রায় সময় ট্রাফিক পুলিশের নানা অনিয়মের কর্মকান্ড প্রকাশ্যে উঠে আসছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এই অনিয়মের প্রবনতা অন্যান্য জায়গার থেকে সব থেকে বেশি। তবে গত দুই দিন আগে রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবের সামনে এক ট্রাফিক সার্জেন্টের উদ্দেশ্যে চীনা নাগরিকের টাকা ছুড়ে দেওয়ার একটি ভিডিও উঠে এসেছে প্রকাশ্যে। এই নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা। তবে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই বিষয়ে তদন্ত করে সার্জেন্টের কোনো দোষ খুঁজে পায়নি। এদিকে এমন কান্ডে অবশেষে পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ঐ চীনা নাগরিক।
মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের সামনে ট্রাফিক সার্জেন্টকে লক্ষ্য করে এক চীনা নাগরিকের টাকা ছুড়ে মারার ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে সার্জেন্টের কোনো দোষ পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কোনো কারণ ছাড়াই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন ওই চীনা নাগরিক। চীনা নাগরিকও প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এদিকে চীনা নাগরিকের গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ। তার বক্তব্যে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ও অন্যান্য ট্রাফিক সদস্যদের কোনো দোষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিস্তারিত জানতে ওই চীনা নাগরিককে ফোন করা হয়। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহেদ আল মাসুদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঘটনার পর আমরা ডিএমপির কাফরুল থানায় একটি জিডি করেছি। সেদিন কী ঘটেছিল তা জানতে আমরা তদন্ত করছি।
“প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে চীনা নাগরিক সিএলএক্স নামে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করত,” তিনি বলেছিলেন। ঘটনার দিন তিনি একটি প্রাইভেটকারে অফিসে যাচ্ছিলেন। পরে রাওয়া ক্লাবের সামনে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট তার গাড়ি থামিয়ে চালকের কাছ থেকে কাগজপত্র দেখতে চান। ড্রাইভার কাগজ দেওয়ার পর সার্জেন্ট তা পরীক্ষা করছিলেন। এরই মধ্যে ওই চাইনিজ কোনো কারণ ছাড়াই গাড়ি থেকে নেমে উত্তেজিত হয়ে মেজাজ হারিয়ে টাকা ছুড়ে ফেলে এবং অ/শ্লী/ল ভাষায় কথা বলে। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কোনো টাকা দাবি করেছেন কি না জানতে চাইলে ডিসি শাহেদ আল মাসুদ বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত ট্রাফিক সার্জেন্টের শরীরে ‘বডি ইয়ার ক্যামেরা’ ছিল। ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ও অডিওতে এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি। এছাড়া উপস্থিত কেউ এ ধরনের কথা বলেননি। তিনি বলেন, চালককে ফোন করে বলা হয়েছে যে, তিনি আমাদেরও বলেছেন যে, কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা শুধু গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজপত্র পরীক্ষা করতে দুই-তিন মিনিট সময় লাগানোর আগেই চীনা লোকটি গাড়ি থেকে নামল। গাড়ি থেকে নেমে কোনো কারণ ছাড়াই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আগে বা পরে, চালক ছাড়া অন-ডিউটি ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা চীনা নাগরিকের সাথে কথা বলেননি।
এ ঘটনার তদন্ত চলছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যের কোনো গাফিলতি বা অপরাধ পাওয়া যায়নি। সে এগুলো নিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করছিল। আমরা ওই চীনা নাগরিকের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি ঘটনার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। পরে লিখিতভাবে ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করে ক্ষমা চাওয়ার কথা জানান তিনি। মঙ্গলবার, একজন চীনা নাগরিক রাওয়া ক্লাবের সামনে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের দিকে টাকা ছুড়ে মারে। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, চীনা ব্যক্তি বারবার ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে বলছেন, “তুমি টাকা চাও, আমি তোমাকে এই… টাকা” (তুমি টাকা চাও, আমি তোমাকে টাকা দিচ্ছি)। এই বলে টাকা ছুড়ে মারে। এ সময় ওই বিদেশীকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতেও শোনা যায়।
রাস্তায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে কিছু অসাধু ট্রাফিক পুলিশের অনিয়মের সূত্র ধরে পুরো বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে এমন অনিয়মকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির সম্মুখীন করেছে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এমনকি অনিয়মকারী ব্যক্তিদের জন্য প্রদান করেছে কঠোর হুঁশিয়ারি।