পুলিশ আসামি ধরবে এটাই স্বাভাবিক, তবে এর মাঝে অনেক সময়ই চোর-পুলিশের খেলা ও মিলে ভালোই। বর্তমান বাংলাদেশের মাদকের আইন অত্যন্ত কড়া। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে শোনা যায় মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাণ নিতেও দেখা গেছে অনেক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কে। তবে এমন কি শুনেছেন মাদক আসামী পুলিশের গাড়ি চালাচ্ছে, তাও আবার গাড়ি চালিয়ে প্রাণ নিয়ে নিল দুই পুলিশ সদস্যের! হ্যাঁ সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে আমাদের দেশে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে সোনারগাঁয়ে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীর একটি ব্যক্তিগত গাড়ি আটক করে সোনারগাঁ থানায় ফেরার পথে আসামি গাড়িটি খাদে ফেলে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামী (চালক) গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ফরিদপুর ভাঙ্গা থানার মুনসুরাবাদ গ্রামের কাজী নুরুল ইসলামের ছেলে কাজী সালেহ আহমেদ ও গোপালগঞ্জের চরভাতপাড়া গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে এসএম শরিফুল ইসলাম। তারা সোনারগাঁও থানায় কর্মরত ছিলেন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনায় রফিকুল ইসলাম নামে এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আহত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা গেছে, সোমবার সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবার চালান নিয়ে আসা একটি প্রাইভেটকারকে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া মোড় এলাকায় আটক করা হয় জেলা পুলিশের সহায়তায়। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী সালেহ আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম গাড়িটিকে থানায় নিয়ে যান। তারা সোনারগাঁ থানা থেকে ৮০০ মিটার দূরে দত্তপাড়া এলাকার একটি পুকুরে পৌঁছালে চালক আলমগীর তাদের বহনকারী গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পুকুরে গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাজী সালেহ আহমেদ ও শরিফুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।
একাধিক পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে যে গ্রেফতারকৃত আসামী গাড়িটিই চালাচ্ছিল। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মি সোমবার অভিযুক্ত এখনো ধরা পড়েনি।
তিনি আরও জানান, আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ইয়াবার কিছু অংশ পানিতে পড়ে গলে যায়। বাকিদের উদ্ধার করা হয়েছে।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চালক আলমগীরকে আটক করা যায়নি। তবে তাকে গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চলছে।
এমন ঘটনা আসলেই অভাবনীয়। পলাতক মাদক মামলার আসামিকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এখন দেখার বিষয় পুলিশ কতটা তৎপরতার সাথে কাজ করে, আর আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় কিনা। গ্রেফতার করা গেলে তাদেরকে কি সাজা দেয় সেটাও এখন দেখার বিষয়। তবে মাদক মামলার আসামিকে দিয়ে গাড়ী চালানোটা একটু রহস্যজনকও।