বেশ কয়েকদিন ধরে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্য বেশ আলোচনা-সমালোচনা বিরাজ করছে। এবং বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি এই কমিশন গঠনের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। এরই সুবাদে দেশের সকল রাজনৈতিক দল গুলোর সঙ্গে সংলাপে লিপ্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে দেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যোগ দিয়েছেন। এবং অনেক দল অনেক ধরনের পরামর্শ প্রদান করেছেন। এদিকে গকলা মন্ত্রীসভা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইনের খসরা অনুমোদন করেছেন। নতুন আইন প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা উঠে এলো প্রকাশ্যে।
নতুন আইনে গঠিত হবে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত বিলের অনুমোদনও দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংসদের এই অধিবেশনে আইনটি অনুমোদন করা হবে। নতুন আইনের মাধ্যমে পরবর্তী কমিশন গঠন করতে চায় সরকার। সংবিধান অনুযায়ী ইসি গঠনের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির। সংবিধানেও এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কোনো সরকারই আইন করেনি। তখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সরাসরি ইসি গঠন করতেন। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুটি কমিশন গঠন করেছেন। আবারও একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি গত ২০ ডিসেম্বর সংলাপ শুরু করেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে নতুন ইসি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপর বিভিন্ন দল সংলাপে অংশ নেয়। এই সংলাপে ৩২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আওয়ামী লীগসহ এ পর্যন্ত ২৫টি দল অংশ নিয়েছে। তবে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, বাসদ, জেএসডি (রব)সহ সাতটি রাজনৈতিক দল সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংলাপে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময় ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার এই আইনের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠন করতে চায়।
কিন্তু সময় সারমর্ম হিসেব অনুযায়ী, বর্তমান হুদা কমিশনের ম্যান্ডেট ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। এরই মধ্যে একজন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে হবে। হাতে মাত্র ১৫ কার্যদিবস আছে। তবে সরকার শুধু ইসি গঠনের বিল অনুমোদন দিয়েছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে সংসদে উত্থাপন হতে কিছুটা সময় লাগবে। এমতাবস্থায় উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় নতুন সিইসি-ইসি নিয়োগ হবে নাকি নতুন আইন হবে তা স্পষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন গঠনের নতুন আইন হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, নতুন আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকার আন্তরিক। আশা করা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে আইন পাস করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হবে।
এত অল্প সময়ে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অসম্ভব কিছু নয়, অপেক্ষা করুন। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন ছিল আসন্ন নির্বাচন কমিশন এই আইনের অধীন হবে কিনা মন্ত্রিসভা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ এর খসড়া অনুমোদনের পর। জবাবে তিনি সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বলেন: ” আইনটি অনুমোদন হলে তা অনুমোদন করা হবে। আজ অনুমোদন, হয়তো আগামীকাল বিচার মন্ত্রণালয়ের দুই দিন হবে। তাই সংসদে পাঠালে সময় লাগবে।” সংসদেও কয়েকদিন। তারা স্থায়ী কমিশনে যাবে, তারা পরীক্ষা করবে। যদি হয়, তাই হবে, সমস্যা নেই।’
তিনি বলেন, আমরা আশা করি আইনটি চূড়ান্ত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এটা খুব বড় আইন নয়। আমরা যেমন আইন নিয়ে কাজ করে আসছি, তেমনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনও রয়েছে। এটি করা শালীন জিনিস, এবং এটি সেখানেই শেষ হওয়া উচিত। ” তবে রাষ্ট্রপতির সংলাপের আহ্বানের আলোকে সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আইন চূড়ান্ত হলে আইনের আলোকে সিইসিসহ অন্যান্য ইসি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং রাষ্ট্রপতির চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আইনটি খুব একটা পার্থক্য করে না। উভয়ই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই আইন এমনকি দুই দফায় ইসি গঠনের বৈধতা দিয়েছে।
নতুন আইন গঠন করা হলেও এবারের নির্বাচন সার্চ কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়ে দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এবং নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দাবিও জানিয়েছে। তবে সরকার সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে আগামী নির্বাচন ব্যবস্থা পদ্ধতি।