বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী। সম্প্রতি তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যেন গোটা দেশজুড়ে বইছে নানা গুঞ্জন। বিশেষ করে, নেতাকর্মীরা তো দূরের কথা তার মৃত্যুর সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারছে না পরিবারও। এর আগেই বিএনপির গুণী এই নেতার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ৪ মাস আগেই হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা যান। তবে এবার হারিছের প্রবাসী কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী বলছেন উল্টো কথা। তিনি দাবি করেছেন হারিছ চৌধুরী (বাবা) লন্ডনে নয়, ঢাকায় মারা গেছেন।
তিনি বলেছেন, আব্বু আসামে কিংবা লন্ডনেও যাননি। বাংলাদেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। তানজিনা জানান, ঢাকার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা তার বাবা গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।
আজ শনিবার ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরীর একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। তানজিনা জানান, তার বাবার দাফন করা হয়েছে ঢাকার বাইরে। যেখানে যেতে এক-দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালাতে হয়। গ্রামের বাড়িতে দাফন করানোর সাহস করতে পারেননি তার পরিবারের লোকজন।
সামিরা বলেন, চাচা আশিক চৌধুরী সাহস করতে পারেননি। তিনি তখন আমাদের বলেছেন- কোনো অবস্থাতেই গ্রামে নিয়ে এসো না। বারবার তিনি নিরাপত্তার কথা বলেছেন। তখন ভয় পেয়ে যাই। বাস্তব অবস্থা এমনই। কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। উপায় কি!
সম্প্রতি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর তথ্য নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এর আগে তার বড় বোন ও এক ছোট ভাই গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা শুনেছেন, তবে নিশ্চিত নন। তবে হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী দাবি করেছেন, চার মাস আগে লন্ডনে মারা গেছেন হারিছ চৌধুরী। এদিকে সামিরা বলেছেন, কেন তিনি বলেছেন সেটা আমি বলতে পারবো না। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
হারিছ চৌধুরী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। জোট সরকারের আমলে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই নেতা এক-এগারোর পালাবদলের পর দেশ ছাড়েন। তার পর থেকে হদিস ছিল না তার। ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী বা আত্মীয়-স্বজন কেউ তার ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি।
গত ২৪ আগস্ট হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে ব্যারিস্টার সামিরার কথা হয়। তখন তার কথাবার্তা ছিল অগোছালো, অস্পষ্ট। কথা বলতে পারছিলেন না। হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছিলেন। সামিরা বলেন, ২৬ আগস্ট ঢাকায় পৌঁছার পর হাসপাতালে প্রথম দেখা। তখন তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।
সামিরা জানান, তার বাবার সম্পত্তি গ্রামে রয়েছে। ঢাকায় কোনো সম্পত্তি নেই। গ্রামে স্কুল, মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তার বাবা। যা দেখভাল করেন আশিক চৌধুরী।
তবে এতদিন পর হঠাৎ করেই বিএনপির অন্যতম গুণী এই নেতার মৃত্যুর খবরে যেন গভীর শোকাহত হয়ে পড়েছেন দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা। তারা বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, তিনি আর তাদের মাঝে নেই। হারিছের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পরিবার-পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।