বর্তমানে বাংলাদেশে ঘুষ নেওয়া টা একটা বড় ব্যাপার না। প্রতিনিয়ত দেশে যেন বেড়ে চলেছে ঘুষের মত বেআইনি কাজ। কোথাও দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে কোথাও বা সেটা ধামা চাপাই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু এমন কি শুনেছেন মাস্টার্স পাশ করেও নির্বাচনে নমিনেশন নিতে গেলে গুনতে হচ্ছে টাকা! সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের থেকে ফরম পূরণের নামে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক তোফাজ্জল হোসেনের এ ঘুষ নেওয়ার ভিডিও নিয়ে চলছে তোলপাড়। এ ঘটনায় নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসের ওই সহায়ক তোফাজ্জলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর এমডি ওবাদুল্লাহ নামক স্থানীয় একজনের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার দেওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।
পরে ভিডিওটি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুল হকের নজরে আসলে অফিস সহায়ক তোফাজ্জল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তোফাজ্জল হোসেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসে চার বছর ধরে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত আছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ফরম পূরণ করে দেওয়ার পর টাকা কম দেওয়ায় ওই ভিডিওতে তোফাজ্জল হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘অনার্স-মাস্টার্স পাস করে এসেছি, দুই হাজারের নিচে টাকা নেই না। সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা নিচ্ছি। আপনার মনোনয়ন কনফার্ম করার দায়িত্ব আমার।’
স্থানীয়রা জানান, সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ চলছে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আসা প্রতি প্রার্থীর থেকে ফরম পূরণসহ অন্যান্য কাজ বাবদ দুই থেকে তিন হাজার করে টাকা নিচ্ছেন এবং মনোনয়ন কনফার্ম করার দায়িত্বও নিচ্ছেন অফিস সহায়ক তোফাজ্জল।
এ বিষয়ে জানতে অফিস সহায়ক তোফাজ্জল হোসেনের মোবাইলফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, ফরম পূরণের নামে টাকা নেওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশনা রযেছে। জবাব পাওয়ার পর পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেওয়ান সারওয়ার জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নির্বাচনি কাজে সহায়তা করতে ঘুষ নেওয়ার এমন ঘটনা অতীতে হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পাওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ডা. হরি শংকর দাস জানান, এভাবে অফিসের সামনে টেবিল-চেয়ার বসিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীদের থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত জানান তিনি।
অনৈতিকতা আর অরাজকতায় যেন দেশ ছেয়ে গেছে। দায়িত্বরত ওই কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে ১০ দিনের ভিতরে শোকজের উত্তর দিতে। তবে কি এখানেই শেষ নাকি আইনি ব্যবস্থা পরবর্তীতে নেওয়া হবে! সেটা হয়ত সময়ই উত্তর বলে দেবে।