বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম বৃহৎ একটি অঙ্গ-সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দলের ধারা অব্যগত রেখে রীতিমতো নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে গেলেও বিভিন্ন সময়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে এ সংগঠটির বিরুদ্ধে। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আবারও ছাত্রলীগকে কেন্দ্র করে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস তাঁকে গালিগালাজ করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মো. আল আমীন সিদ্দিকের অভিযোগ, সংগঠনের এক নেতাকে থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগ তুলে সনজিত তাঁর সঙ্গে এ আচরণ করেছেন। যদিও তিনি ওই নেতাকে থাপ্পড় দেননি, শুধু সরিয়ে দিয়েছেন।
আল আমীন সিদ্দিক বলেছেন, সোমবার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে সনজিত চন্দ্র দাস তাঁর ওপর চড়াও হয়েছিলেন। ঘটনার কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আল আমীন সিদ্দিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ রাশুকে থাপ্পড় দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সনজিত। এ সময় তিনি আল আমীন সিদ্দিককে গালিগালাজ করেন এবং ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন। সনজিতের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে আল আমীন সিদ্দিক বলেন, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে ওয়ালিউল্লাহ রাশু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরিদা পারভীনের গায়ের ওপর গিয়ে পড়েন। ফরিদা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন, তাঁরাও তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি মধুর ক্যানটিনে এসে সনজিত চন্দ্র দাসের কাছে বিচার দেন।
ধানমন্ডি থেকে ফিরেই সনজিত চন্দ্র দাসের ওই আচরণের মুখোমুখি হন বলে জানান আল আমীন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘সনজিত আমাকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় তিনি আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার হুমকিও দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কীভাবে রাজনীতি করি, তা তিনি দেখে নেবেন। আমি রাশুকে কোনো থাপ্পড় দিইনি, শুধু সরিয়ে দিয়েছিলাম।’
কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফরিদা পারভীনও বলছেন, ধানমন্ডিতে কোনো থাপ্পড় বা মারামারির ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন উপলক্ষে ধানমন্ডিতে বেশ ভিড় ছিল। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁরা যখন ফিরছিলাম, তখন ওয়ালিউল্লাহ রাশু তাঁর বাঁ পাশে ছিলেন৷ তাঁর পেছনেও নেতা-কর্মীদের বেশ চাপ ছিল।
ফরিদা পারভীন জানান, একপর্যায়ে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়ালিউল্লাহ রাশুকে জায়গা করে দিতে বলেন। তিনি বলেন, ‘এ সময় পাশেই থাকা আল আমীন সিদ্দিকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ রাশুকে সাইড দিতে বলেন এবং হাত দিয়ে তাঁকে কিছুটা সরিয়ে দেন। তখন রাশু বলেন, পেছন থেকে চাপ থাকায় তিনি সরতে পারছেন না। তখন আল আমীন সিদ্দিকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কথা প্রসঙ্গে রাশুকে বলেন, “তোরা আপাকে চিনিস না, সাইড দিবি না?” এটুকুই ঘটনা।’
যাঁকে থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগে এই গালিগালাজ ও হুমকি, সেই নেতা ওয়ালিউল্লাহ রাশুর মুঠোফোনে ফোন করে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় নেতার করা ঐ অভিযোগের আলোকে ছাত্রলীগ সভাপতি চন্দ্র দাসের সঙ্গে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, ফলে এ ব্যাপারে তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে ফোন দেয়া হলে, তারাও ফোন রিসিভ করেননি।