সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে চলছে তুমুল তোলপাড় সেই সাথে আলোচনার ঝড়। তারি মাঝে বেরিয়ে আসলো আর একটি সমীক্ষা। যেখান থেকেই জানা গেছে নারায়ণগঞ্জে নারী ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। বলাবাহুল্য যে নারী ভোটারদের হাত করতে পারলেই তার জয় আওনেকটা নিশ্চিত। তাইতো প্রার্থীকে নির্ভর করতে হচ্ছে নারীদের উপরও। দেখা গেছে নারীদের নিয়ে কথা বলতেও প্রতিটা প্রার্থীকেই, চেষ্টা করে যাচ্ছেন নানান ভাবে হাতে রাখার নারী ভোটারদের। তাইতো বলাই চলে নির্বাচন নির্ভর করছে অনেকটা নারীকেন্দ্রিকও।
নারায়ণগঞ্জের সিটি কপোরেশনের নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকাসহ ২৭টি ওয়ার্ডে প্রায় ২০ লাখ লোকের বসবাস। তারমধ্যে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
ভোটারদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী। এবার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয়-পরাজয় ভোটের হিসাবে ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছে নারী ভোটাররা। তাই নারী ভোটারদের মন জয় করতে তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থীরা। দিচ্ছে নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি।
অপরদিকে নারী ভোটারদের দাবি এবার তারা বুঝেশুনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। কারণ গত দুইবারের নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের সমস্যা আর সমাধান হয়নি। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সিটি এলাকায় গৃহস্থালির ময়লা ড্যাম্পিংয়ের অভাবে নারীদের বেশি ভোগান্তি পোড়াতে হচ্ছে। পাশাপাশি নানান সমস্যার মধ্যে রয়েছে ইভটিজিং, অতিরিক্ত টেক্স আদায়, সড়কে পর্যাপ্ত বাতি না থাকায় অন্ধকার ও পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকায় ছেলে-মেয়েরা অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে।
তাই এবার নির্বাচনে এমন প্রার্থীকে বেছে নিতে চান নারীরা যারা ভোটে নির্বাচিত হয়েও তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। অপরদিকে এ সকল প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনরাত প্রচারণায় ব্যাস্ত প্রার্থীরা।
অপরদিকে নারী ভোটাররা আরটিভি নিউজের কাছে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, ভোট আসলেই প্রার্থীদেরকে দেখা যায়। ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর তাদেরকে আর সহজে পাওয়া যায় না। তাই এবার ভোটযুদ্ধে এমন একজন প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে চান, যে নাগরিকদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবেন।
এ ছাড়া সিটি কপোরেশনের বড় সমস্যা ময়লার ভাগাড়। গৃহস্থালির এ সকল ময়লা নিয়ে নারীদেরকেই বেশি ভুক্তভোগী হতে হয়। অপরদিকে সিটি কপোরেশনের এলাকায় পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় পরিবারের উঠতি বয়সী কিশোরদেরকে নিয়ে আছেন বিপাকে। তাই ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে তাদের পছন্দ প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার জন্য নারী ভোটাররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেলিনা বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের আইয়াবো এলাকায় ছোট্র ২ কাঠা জমির ওপর বাড়ি। স্বামী-স্ত্রী দুইজনে চাকরিজীবী। চাকরির বেতন ও বাড়ি ভাড়া দিয়ে তাদের সংসার চলে। সমস্যা হলো সিটি কপোরেশনের অতিরিক্ত কর বোঝার কারণে অনেক অসহায়। এ ছাড়া জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সার্টিফিকেটের মত সাধারণ সার্টিফিকেটেও দিতে হয় উৎকোচ। ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। ১৬ তারিখ নির্বাচনে আমরা এবার সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবো। যে প্রার্থী আমাদের সুখে-দুঃখে আমরা সব সময় কাছে পাব।
সিদ্ধিরগঞ্জের রুমী আক্তার নামে একজন নারী ভোটার আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন যাবত আমরা ময়লা ড্যাম্পিংয়ের জন্য খুব সমস্যায় আছি।
নাম না করার শর্তে একজন বাসিন্দা আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, এবার নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। কারণ নির্বাচনের পর প্রার্থীদেরকে আর পাওয়া যায় না। তাদের পিছনে আমাদের ঘুরতে ঘুরতে সময় চলে যায়। নরমাল সেবা নিতে হলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়।
অপরদিকে নারী ভোটারদের ভোট পেতে অনেকটা মরিয়া প্রার্থীরা, নারীদের মন জয় করতে নানান রকম কৌশল নিয়ে প্রচারণা ব্যস্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার (দিনা) আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, আমি নারীদের উন্নয়নে হস্তশিল্প চালু করব। যে সকল নারী এখনও নিরক্ষর রয়েছেন তাদেরকে স্বশিক্ষিত করার জন্য কাজ করব।
অপর দিকে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নুর উদ্দিন মিয়া জানিয়েছেন, আমি নির্বাচিত হলে নারীদের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে তাদের পাশে থাকব। এ ছাড়া কর্মজীবী নারীরা যাতে সব সময় নিরাপদে চলাচল করতে পারেন তার জন্য ব্যবস্থা নেব।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভি জানান, আমি নিজে একজন নারী। নারীদের সুখে-দুঃখে সব সময় ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব। তারা যে সকল সমস্যাগুলো বলেছেন আমি বারবার বলে আসছি। তা পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হচ্ছে। উন্নয়নের সঙ্গে থাকতে তারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার আরটিভি নিউজকে বলেন, নারীদের অধিকার নিয়ে আমি সব সময় সোচ্চার ছিলাম, এখনও আছি। আমি নির্বাচিত হলে তাদের সকল অধিকার আমার পূরণের চেষ্টা করব।
প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে নারীদের কে সন্তুষ্ট করার জন্য মেতে উঠেছেন প্রার্থীরা। পাল্লাই ভারি বানাতে পারলেই তার জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কে কতটুকু পারল সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। পরবর্তীতে হয়তো ভোট শেষে বোঝা যাবে কে নারীদের আস্থার প্রতীক। তবে এটাও ঠিক শুধুই নারীকেন্দ্রিক নয় সেখানে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা কম নয় নারীদের থেকে বেশি। তবে ভূমিকায় যে এগিয়ে নারীরা সেটা বলার উপেক্ষা রাখে না।