Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তবে এমন পরিকল্পনা ছিল না: নুরুল হক নুর

ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তবে এমন পরিকল্পনা ছিল না: নুরুল হক নুর

বর্তমান সময়ে সমগ্র দেশ জুড়ে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় চেনা মুখ নুরুল হক নুর। তিনি মূলত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই পরিচিতি লাভ করেছেন। এমনকি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি দেশের রাজনীতিতেও বেশ সক্রীয় হয়েছেন। এবং নুতন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন আগামী নির্বাচনে দেশের সকল আসণের হয়ে লড়াই করবেন। সম্প্রতি তিনি নিজেই জানালেন তার রাজনীতিতে প্রবেশ এবং বর্তমান দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে বেশ কিছু কথা।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও ছিলেন সামনের সারিতে। পরবর্তীতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে। সেখানে সবাইকে চমকে দিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে সরব তিনি। সম্প্রতি গঠন করেছেন গণঅধিকার পরিষদ নামে নতুন এক রাজনৈতিক দল। দলটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সদ্য ছাত্রজীবন শেষ করা নুরুল হক নুর এখন সরব রাজনীতিতে। নানা কর্মসূচি নিয়ে তিনি সরব রাজপথে। সম্প্রতি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন, নতুন দল গণঅধিকার পরিষদ, নিজের রাজনৈতিক ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন নুর।

তার কাছে প্রশ্ন ছিল গণঅধিকার পরিষদের ভবিষ্যৎ কি?
উত্তরে নুরুল হক নুর বলেন, দেশে রাজনীতির একটা নতুন ধারা তৈরি করার চেষ্টা করছি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা ভালোই কাজ করতে পারছি। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মানুষের কাছ থেকে অসম্ভব সাড়া পাচ্ছি। আর মানুষের সাড়া না পেলে তো আমরা খালি ঝুড়ি নিয়ে ঘুরতাম না। আমাদের প্রতি মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা আছে বলেই আমরা একটা স্বপ্ন দেখছি। আমরা আশা করি খুব অচিরেই দেশে পরিবর্তনের একটি পরিবেশ তৈরি হবে। আর তাতে মানুষের কাছ থেকে যে সাড়া পাচ্ছি সেটার একটা বাস্তবতা আমরা দেখাতে পারবো।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবনা কি?
এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এই সরকার ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে। তারা একটা প্ল্যান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, যেটা এদেশে যারা বিরোধী দল ছিল তারা বুঝতে পারেনি। বিডিআর হ/ত্যা/কা/ণ্ড, বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করা, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এসব করে মূলত সরকার বিরোধীগুলোর শক্তি এবং রিয়্যাকশন টেস্টিফাই করেছে। যখন তারা দেখলো যে বিরোধী দলগুলো তেমন রিয়্যাকশন দেখাচ্ছে না এরপরে তারা আরও বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্ত জায়গায় একটি কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই বাস্তবতায় এবং এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

গণঅধিকার পরিষদ জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে, এ দাবির ব্যাখ্যা কী জানতে চাইলে নুর বলেন, দেশে যে সংকট চলছে এর থেকে উত্তরণের জন্য একটি জাতীয় সরকার প্রয়োজন। এটা দুই বছরের জন্য হতে পারে। এটা দেশের সকল রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে। জাতীয় সরকার না হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। এ ছাড়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন বা এই শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমরা দু’টো বিষয় ভাবছি। প্রথম বিষয় হচ্ছে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে দাবি মানাতে বাধ্য করা। দ্বিতীয়ত, সরকার যদি এই বিষয়ে একমত না হয় তাহলে গণতান্ত্রিকভাবে যে সকল কঠোর কর্মসূচি পালন করা যায় সেটা করা। মূলত এই দু’টি প্রক্রিয়া নিয়েই আমরা এগোচ্ছি। পরে সময় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী বাকি করণীয় ঠিক করবো।

দলের নিবন্ধনের অগ্রগতি কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দলের নিবন্ধনটাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবছি না। এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে যেভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, প্রতিষ্ঠান গুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, ভিন্ন মত এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক অধিকারগুলোকে খর্ব করছে, বিরোধীদের গুম, খুন করছে সেখানে আমাদের মতো একটা প্রতিবাদী এবং তারুণ্যের চেতনার দলকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তারা (সরকার) নিবন্ধন দেবে না। তারপরেও সরকারের আইন এবং নির্বাচন কমিশনের যেসব বিধিমালা আছে সেটা ফুলফিল করে একটা আবেদন করবো। যদি নিবন্ধন দেয় দিবে, না হলে নিবন্ধনের জন্য যেটা করা দরকার সেটাই করবো। বিশেষ করে, আমরা যদি এদেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারি তাহলে নিবন্ধন দিয়ে কি হবে। তাই আমরা দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।

নতুন ইসি গঠনে প্রেসিডেন্টের চলমান সংলাপ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
এটা একেবারেই অনর্থক একটা সংলাপ, অকাজের সংলাপ। এখান থেকে কোনো ফয়সালা আসবে না। গত দুটি নির্বাচন দেশে হয়েছে প্রধান বিরোধী দলবিহীন এবং দুটো নির্বাচনেই দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এর আগেও সংলাপ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো তারা তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু আদতে কোনো ফল তো হয়নি। আমি মনে করি, এই চলমান সংকট নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি সংলাপ ডাকা উচিত। সেখানে নির্বাচনকালীন একটা আমূল সংস্কার নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অনেকে বলেন, সরকারের সঙ্গেও আপনাদের যোগাযোগ আছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি এমন প্রশ্নে নুর বলেন, আমাদের দেশের মানুষ এখনো রাজনৈতিকভাবে খুব একটা সচেতন নয়। মানুষ যদি সচেতন হতো তাহলে ৩০শে ডিসেম্বর ভোট দিতে না পেরে রাস্তায় নামতো। মানুষ কিন্তু সেটা করেনি। জনগণ তাদের সকল ইজারা রাজনৈতিক দলের কাছে দিয়ে রেখেছে। মানুষের মনে নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা সেটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। আমরা যেটুকু বলছি, যেটুকু করছি সেটুকু যদি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে কেউ করতে পারে তাহলে আমি তাকে স্যালুট জানাবো। বাংলাদেশে তো ৩৯টি রাজনৈতিক দল আছে কিন্তু গত ৩ বছরে দেশের কোনো অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তো ৩৯ দিনও রাস্তায় দাঁড়ায়নি তারা। তাহলে তাদের কাজটা কি? আর সরকারের সঙ্গে যদি আমাদের সমঝোতা থাকতো তাহলে সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীরা এভাবে মা/র খেতো না, মা/ম/লা-হা/ম/লার শিকার হতো না।

এত দ্রুত রাজনীতিতে আসার স্বপ্ন ছিল কিনা-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনীতি করবো ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষ যারা, তাদের মনে এমনিতেই একটা সাহসী চেতনা থাকে। তবে এত অল্প সময়ে রাজনীতিতে চলে আসবো এমন পরিকল্পনা ছিল না। তিনি বলেন, রাজনীতি যদি সঠিক মানুষের হাতে না থাকে তাহলে দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, বিপথে পরিচালিত হবে। কাজেই রাজনীতিকে রাজনীতির পথে রাখার জন্য, সঠিক মানুষের হাতে রাখার জন্য, সমাজ, রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য দেশের মানুষকে দেশের রাজনীতিতে যুক্ত হতে হবে।

ইতিমধ্যে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের সকল রাজনৈতিক দল গুলো বেশ সরব হয়েছে। এই নির্বাচনের কার্যক্রম সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাষ্ট্রপতি। এমনকি তিনি এই নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে দেশের সকল রাজনৈতিক দল গুলোর সঙ্গে ধাপে ধাপে বৈঠক করছেন। কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। এদের মধ্যে কয়েকটি দল নির্বাচন কমিশন গঠনের তাগিদে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন।

About

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *