জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দিন দিন নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। আর এ ধারা অব্যহত থাকলে আগামীতে সবাইকে বড় কোনো সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি গত কয়েকদিন আগেই জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল সম্পর্কে অবগত করে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে একটি চিঠি লেখেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী আরিয়ান আবীর। তবে চিঠির জবাব পেতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে। এরই মধ্যে তার পাঠানো ঐ চিঠির জবাব দিয়েছেন আন্তোনিও ম্যানুয়েল দে অলিভেরা গুতেরেস।
আরিয়ান বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেছেন। গত ১ ডিসেম্বর এ চিঠি প্রেরণ করেন তিনি। চিঠি পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১৫ দিন। হাতে পাওয়ার পরদিনই জবাব দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব।
আরিয়ানের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ব জলবায়ু তহবিল সংস্থায় ১৭০ ট্রিলিয়ন ডলার পড়ে আছে। সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশের কোম্পানিগুলোকে একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। এসব কোম্পানি বন্ধ করার ফলে দেশগুলোতে চলমান জাতীয় অর্থনীতিতে যে সমস্যা দেখা দিবে, আমরা তা ওই ১৭০ ট্রিলিয়ন ডলার দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবো। যদি এটা দিয়ে ক্ষতিপূরণ সম্ভব না হয়, তবে প্রয়োজনে ক্লাইমেট চেইঞ্জ ফান্ড গঠন করে সেই ফান্ড যোগাড়ের জন্য পুরো পৃথিবীব্যাপী ভিক্ষা করা শুরু করবো’।
তিনি আরও লিখেন, ‘আপনি কি চীন, রাশিয়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন? যদি না পান তাহলে গত দশ বছরে পৃথিবী এতটুকু সুস্থ হয়নি কেন? যদি ভয় না পান তাহলে কেন দিনের পর দিন কার্বন, মিথেন, সালফারের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থগুলো বেড়েই চলেছে। যদি এখনই কঠোর থেকে কঠোরতর পদক্ষেপ নিতে না পারি, তাহলে ২০৫০ সাল হবে পৃথিবীর শেষ সময়। কিন্তু আমরা বাঁচতে চাই, আমরা বাঁচাতে চাই’।
আন্তোনিও গুতেরেস এই চিঠির জবাবে লিখেছেন, ‘তোমার চিঠি পেয়ে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। পৃথিবীর এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে ভাবার জন্য তোমার মানসিকতার উচ্চ প্রশংসা করছি’।
আরিয়ান আবীর সাংবাদিকদের বলেন, ছোটবেলা থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমার আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তখন থেকে আমি জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশের বই পড়তাম। জানতে চাইতাম। পরে মনে হলো, এভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হলে বিশ্বে টিকে থাকা দায় হয়ে যাবে। তাই নিজ হাতে লিখে ৭ পৃষ্ঠার একটি চিঠি জিপিওতে গিয়ে রেজিষ্ট্রি করে Antonio guterres, secretary general of United Nations, United N. Headquarters, NY.1000, New York, USA এ ঠিকানায় পাঠিয়ে দেই। এ চিঠি পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১৫ দিন। পরে ১৬ দিনের মাথায় আমার চিঠির জবাব দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো এত গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করায় রীতিমতো নেটিজেনদের প্রসংশার জোয়ারে ভাসছেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী আবীর। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দিন দিন মানুষকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হলেও, এ নিয়ে কোনো চিন্তাই অনেকের। আর সেখানে এ ঘটনা অবগত করে জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদশের আবীর। তাই তার এ কর্মকাণ্ডে বেশ মুগ্ধ হয়েছেন নেটিজেনরা।