বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনা ভাইরাস। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় অসহায় ও হতদরিদ্রদের। তবে এ সময়ে অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা যায় অনেককে। কিন্তু কেউ কেউ আবার সাধারণ মানুষের এই অসহায়কে পুজি করে গড়ে তোলেন প্রতারণার ব্যবসা। আর সেই তালিকায় এবার নাম উঠলো এই নারী ম্যাজিস্ট্রেটের।
করোনায় অসহায় ও হতদরিদ্রদের ত্রাণসহায়তা দিতে সহকর্মীদ পরিচিতজনদের থেকে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী কমিশনার ( প্রশিক্ষণরত) নিশাত ফারাবীর বিরুদ্ধে। তিনি ৩৮তম বিসিএসে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংযুক্ত আছেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর (রোববার) নিশাতের ব্যাচের কর্মকর্তারা এস এম আব্রাহাম লিংকন এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ আছে, অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য ফারাবী ৩৮ তম বিসিএন ব্যাচের কয়েকশ কর্মকর্তার কাছ থেকে থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
তথ্য মতে, পিএসসি কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্তির পর থেকেই নিশাত ফারাবী বিভিন্ন অজুহাতে প্রথমে ‘অসহায় ছাত্রকে সহায়তা’র নামে তহবিল সংগ্রহ করেন। এছাড়া সরকারি তথ্য ও সেবা নম্বরে (৩৩৩ কোড) দরিদ্র মানুষজন সহায়তা চাচ্ছে উল্লেখ করে তাদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করেন। ৩৮তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের কাছে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক মেসেঞ্জার আইডি (নিশাত ফারাবী অন্তরা) থেকে সম্বলহীন, গরীবদের জন্য ফান্ড কালেকশন করছেন।
নিশাত ফারাবী মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ছাত্রী ছিলেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেকের কাছ থেকেও তিনি একই কায়দায় অর্থ সংগ্রহ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিকাশ নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করে এই অর্থ নিয়েছেন। যে নম্বরগুলো ব্যবহার করে এই অর্থ নিয়েছেন সেগুলো নিশাত ফারাবীর নামে নিবন্ধনকৃত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চিঠিতে ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের পক্ষে এস এম আব্রাহাম লিংকন চিঠিতে আরও লিখেছেন, অভিযুক্ত নিশাত ফারাবীর প্রতারণা সত্য হলে এমন কাজ সিভিল সার্ভিসের মর্যাদাই শুধু নষ্ট করবে না, উপরন্তু সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারের উপর মানুষের বিশ্বাস ও ভালবাসা হ্রাস পাবে। এজন্য তিনি ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
ঘটনার বিষয়ে নিশাত ফারাবী গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি ডিসি স্যার (ডিসি সিরাজগঞ্জ) হ্যান্ডেল করছেন। আপনি তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
নিশাতের স্বামী এস এম রবিন শীষ সিরাজগঞ্জ সদরের এসিল্যান্ড বলেও জানা গেছে।
এদিকে নারী এই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের ব্যাপারে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আর এ সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে আশ্বাস দিয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নিশাত এই মুহুর্তে প্রশিক্ষণে রয়েছেন। তবে সেখান থেক ফিরে এলে তদন্ত চালিয়ে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।