বাংলা সিনেমার খুবই পরিচিত এক মুখ শারমিন আকতার নিপা। তবে পর্দায় ‘মাহিয়া মাহি’ নামেই অধিক পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি কিছুদিন আগেই স্বামীকে ওমরাহ পালনের উদ্ধশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন গুণী এই অভিনেত্রী। এরপর সেখানে বেশকিছু দিন কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। তবে দেশে ফিরতে না ফিরতেই কাজ নিয়ে কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মাহি । ‘কাগজের বউ’ সিনেমাটি তার করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সবাই ভাবছিলেন, মাহি হয়তো আর সিনেমায় ফিরবেন না। স্বামী-সংসার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন শোবিজকে বিদায় জানিয়ে। সব গুঞ্জনে জল ঢেলে দিয়ে সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিএফডিসিতে ‘বুবুজান’ চলচ্চিত্রের শুটিং করলেন ঢালিউডের ‘অগ্নি’। সঙ্গে দেখা গেল স্বামী রাকিব ও তার কয়েকজন সঙ্গীকে।
শুটিংয়ের ফাঁকে মাহি কথা বলেন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে। জানালেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নানা আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে তার মন্তব্য।
প্রতিবেদক: ওমরাহ করতে গেলেন। দেশে ফিরেই একটি সিনেমা ছেড়ে দেয়া। চারদিকে শোবিজ ত্যাগ করার গুঞ্জন। আবার শুটিংয়ে এলেন। এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাই-
মাহি: আমি তো কোথাও বলিনি সিনেমা বা শোবিজ ছেড়ে দেয়ার কথা। সিনেমা কেন ছাড়বো? প্রশ্নই আসে না। সিনেমায় অভিনয় করার জন্যই সবাই আমাকে চেনে ও জানে। আমি নিয়মিতই অভিনয় করবো। তবে আমার পরিবার আপত্তি করবে বা বিব্রত হবে এমন কোনো কাজ করবো না। একটু চুজি হতে চেষ্টা করবো।
ওমরাহতে যাওয়ার দুই দিন আগেও শুটিং করেছি। যেদিন ওমরাহ হজে যাবো তার আগের রাত ২টা পর্যন্ত একটা সিনেমার ডাবিং করেছি। কোনো পরিচালককে তো সমস্যায় ফেলে দিয়ে যাইনি। মাঝে ১৫ দিনের মতো একটা গ্যাপ ছিল। সেই ফাঁকে গিয়েছিলাম। এটা আমার ব্যক্তিগত প্রশান্তির জন্য যাওয়া।
প্রতিবেদক: সিনেমা ছাড়ার গুঞ্জন দেখে প্রতিক্রিয়া কেমন ছিলো?
মাহি: খুব বিব্রত হয়েছি। আজ যখন শুটিং করতে ঢুকছি এফডিসিতে, বিব্রত লাগছিলো। সবাই তো ভাবছে আমি সিনেমা ছেড়ে দিয়েছি। তাহলে কেন কাজ করছি। এটা আসলে ঠিক না। ইচ্ছে হলো আর একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে দিলাম। সিনেমা আমার প্রফেশন, এটা আমার রিজিকের জায়গা। ওমরাহ তো ইবাদতের জায়গা। ইবাদতের জায়গায় ইবাদত আর কাজের জায়গায় কাজ। যখন সময় কিংবা পরিস্থিতি এমন হবে যে, আমি আর কাজ করবো না তখন আমার ডিরেক্টর, প্রডিউসারদের জানাবো। আপনারাও জানতে পারবেন।
কারণ আমাকে ঘিরে অনেকের অনেক প্ল্যান থাকে। অনেক সিনেমার অর্ধেক কাজ করা আছে, হুট করেই তাদের সমস্যায় ফেলে তো আমি চলে যেতে পারি না।
প্রতিবেদক: ‘কাগজের বউ’ সিনেমাটি ছাড়লেন কেন?
মাহি: ‘কাগজের বউ’ সিনেমার শুটিংয়ের আগে আমার শরীর খুব খারাপ ছিল। শিডিউল ও অন্যান্য আর্টিস্টদের ডেট নেওয়া ছিল। ফলে ওটা ক্যান্সেল করার কোনো ওয়ে ছিল না। বাধ্য হয়ে আমি নিজে সরে এসেছি সিনেমাটি থেকে। আমি শারীরিকভাবে ওই কয়টা দিন অসুস্থও ছিলাম। আমার জন্য একটা টিমকে তো ভোগাতে পারিনা। সেটা করলে তখন নেগেটিভ খবর ছড়াতো।
প্রতিবেদক: ‘বুবুজান’ সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন-
মাহি: ‘বুবুজান’ সিনেমায় আমি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছি। গতানুগতিক নায়িকার যে ফরমুলা তা এটি নয়। চরিত্রটাই সিনেমার ম্যাজিক। কমন ফরমুলা মেনে কাজগুলো এড়িয়ে চলতে চাই। কয়েকটা গান আর কিছু সময় প্রেম, শেষে নায়ক-নায়িকার মিলন; এ প্যাটার্নে অনেক কাজ করেছি তো। এখন আমি জয়া আপার (জয়া আহসান) মতো গল্প দেখে কাজ করতে চাই। যা দেখে দর্শক আমাকে মনে রাখবে। সেই রকম ছবি হলো ‘বুবুজান’।
প্রতিবেদক: বিয়ে, ওমরাহ, সিনেমা ছেড়ে দেয়া, অডিও কেলেঙ্কারি- কাজের চেয়ে ব্যক্তি মাহি এখন বেশি আলোচনায়। এটাকে কিভাবে দেখছেন?
মাহি: এমনটা আমি চাই না। আসলে সিনেমাগুলো নিয়ে প্রচারণা কম হচ্ছে। দেখুন, করোনার কারণে আমি গেল প্রায় দুই বছর কাজ করিনি। যে সিনেমা গুলো মুক্তি পেয়েছে সেগুলো নিয়ে তেমন প্রচারও ছিলো না। সত্যি কথা বলতে আমার পুরো ক্যারিয়ারে‘ ‘অগ্নি’ ছাড়া আর কোনো ছবির তেমন প্রচার প্রচারণা ছিল না। ‘বিগ ব্রাদার’, ‘ওয়ার্নিং’ নিয়ে কোনো প্রচার হয়নি বলা চলে। ‘পোড়ামন’ খানিকটা প্রচারে ছিল। এই সমস্যাটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের জন্য হয়েছে।
আমি তাই এখন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দেখে কাজ করবো। কেননা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হলো একটা সিনেমার পাওয়ার হাউজ। সিনেমার মান ভালো হওয়া ও হাইপ তুলতে পারাটা তাদের উপরই নির্ভর করে। ব্যক্তি মাহির সংবাদ হতেই পারে। কিন্তু কাজের চেয়ে বেশি হওয়াটা উচিত নয় বলেই আমার কাছে মনে হয়।
প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক অডিও ফাঁস কেলেঙ্কারি সারাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আপনাকে নিয়ে নানা কথাবার্তা ছড়িয়েছে….
মাহি: ওই বিষয়টা নিয়ে কোনো কথা বলব না। অনেক কথা আমিও শুনেছি। যে যেমন বুঝে সে তেমন বলবে। কিছু করার নেই। আমার তো পরিবার আছে। কি রিয়্যাক্ট করতাম তখন! একটা মাতাল মানুষ, তার সঙ্গে কথা বাড়ানো তো বোকামো। এই রকম ফোন তো একদিন আসেনি, আরও অনেক ফোন আসতো। আমার কাছের মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করতাম। তাদের একটা ভয় কাজ করতো। চুপ থাকতে বলতেন। এভাবেই পাশ কাটিয়ে গিয়েছি। দেখেন আমি তখন ফেসবুকে লাইভে আসতে পরতাম। হইচই হতো। কিন্তু আমার ইমেজ, পরিবারের ইমেজ ও নিরাপত্তার বিষয়টিও তো দেখতে হয়। যে খারাপ সে তার শাস্তি পেয়েছে।
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। তিনি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন আর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এটাও একটা দৃষ্টান্ত।
প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সৌদি আরব থেকে। দেখা করা কি সম্ভব হয়েছে?
মাহি: না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিজি থাকেন। উনার সঙ্গে চাইলেই হুট করে দেখা করা যায় না। দেখা করাটা একটা লম্বা প্রসেস। আশা করি দেখা হবে।
প্রতিবেদক: নতুন বছরে কাজের কি পরিকল্পনা…?
মাহি: আগে অনেকগুলো শুটিং-ডাবিং বাকি আছে সেগুলো শেষ করবো। তারপর নতুন কাজ। সম্প্রতি অনেক গল্প আসছে, পড়ছি। পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলছি। ভালো কোনো গল্প পছন্দ হলে চুক্তিবদ্ধ হবো। আশা করছি আপানাদের সঙ্গে সঙ্গে বলবো। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। আমার জন্য দোয়া করবেন।
এদিকে গত ১ ডিসেম্বর ফেসবুক লাইভে শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার নাতনী জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য এবং চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে আপত্তিকর ফোনালাপ ফাঁসের জের ধরে সম্প্রতি তথ্য প্রতমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ব্যাপক আলোচিত ডা. মুরাদ হাসান। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, তা প্রায় সবারই অজানা।