Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Entertainment / কথা সত্য, অন্যের পেছনে লেগে কেউ কোনো দিন ভালো থাকতে পারেন না: আমিন খান

কথা সত্য, অন্যের পেছনে লেগে কেউ কোনো দিন ভালো থাকতে পারেন না: আমিন খান

বাংলাদেশের বিনোদন জগতের সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় চেনা মুখ আমিন খান। তিনি নব্বইয়ের দশকে বাংলদেশের বিনোদন অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন। এবংব অভিনয় করেছেন অসংখ্য সিনেমায়। তার অভিনীত সিনেমা গুলো দর্শক মাঝে ব্যপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমান সময়ে তিনি সিনেমা জগতের বাইরে রয়েছেন। গতকাল এই জনপ্রিয় অভিনেতা ৪৯ বছরে যাত্রা শুরু করেছেন। এই বিশেষ ধিকে ঘিরে বর্তমান দিনকাল সম্পর্কে বেশ কিছু কথপকথন হলো। বিস্তারিত পা ঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রম দিয়ে আমিন খানের চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু। এ কার্যক্রমে নির্বাচিত হয়েও ফিল্মি পলিটিকসের কারণে দুই বছর কোনো ছবির কাজ করতে পারেননি তিনি। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় প্রথম সিনেমা ‘অবুঝ দুটি মন’। মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত এ ছবি মুক্তির আগে বাদল খন্দকারের ‘দুনিয়ার বাদশা’ ছবিতে কাজ করেন। ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করে। এ ছবিই তাঁকে অ্যাকশন ঘরানার চলচ্চিত্রে আগ্রহী করে তোলে। ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া ক্যারিয়ারে ১৬৫টির মতো ছবিতে কাজ করেন। এরপর তিনি চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন।

শুভ জন্মদিন।

ধন্যবাদ।

ফেসবুকে অনেকে এই দিনে শুভেচ্ছা জানান। কেমন লাগে?

মজা লাগে। আমারও যে বাংলাদেশে ফ্যান ক্লাব আছে, জন্মদিন এলে টের পাই। এখনকার জন্মদিনে ফেসবুক অনেক পুরোনো স্মৃতি উসকে দেয়। অনেকে অনেক কিছু লেখেন, বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন। ভীষণ নস্টালজিক হই।

কত বছর পার করে এলেন?

৪৯–এ পা দিলাম, ৫০–এর দ্বারপ্রান্তেও বলা যায়। আমি মুক্ত বাংলাদেশে বেড়ে উঠেছি।

ফেলে আসা বছরের দিকে তাকালে কেমন লাগে?

ফেলে আসা কিছু নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই। এখনো সুস্থ আছি, ভালো আছি, এটাই কম কিসে। যখন কোনো অসুস্থ মানুষের দিকে তাকাই তখন ভাবি, আমি সুস্থ আছি, এই তো ভীষণ ভালো আছি। ধনদৌলত, টাকাপয়সা—এসব আসলে কিছুই নয়। তবে জীবন মানে প্রতিযোগিতা, জীবন মানেই সং/ঘ/র্ষ—এসব তো থাকবেই। এটা না থাকলে জীবনের কোনো চার্মই নেই। সবকিছু মিলিয়ে সুস্থ থাকতে পারাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।

আপনার জীবনের দর্শন কী তাহলে?

প্রত্যেকের জীবন তাঁর নিজস্ব, একদমই নিজস্ব। এই পৃথিবীতে সবাই এসেছেন একা, যাবেনও একা। নিজের ভালো–মন্দ নিজের জন্য। নিজে যদি ভালো থাকতে চান, তাহলে অন্যের ভালো করতে না পারলেও অন্তত ভালো চিন্তাটা করেন। তাহলেই দেখবেন, আপনি নিজেও অনেক ভালো থাকতে পারবেন। আমি এটা মনে রেখে দিন যাপন করি।

চলচ্চিত্রে এলেন। লম্বা সময় কাজ করলেন। মানুষের ভালোবাসাও পেলেন। কিন্তু আপনাকে নিয়ে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, অসময়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন…

এমন কথা আমাকেও শুনতে হয়। সবাই বলে, আমিন ভাই, আপনি যখন সিনেমার কাজে অনিয়মিত হলেন, কাজ ছেড়ে দিলেন, তখনই একজন শিল্পীর কাজ করার সেরা সময়। সত্যি বলতে, একজন শিল্পীর ম্যাচিউরড টাইম হচ্ছে, আমি যখন সরে গেছি, সেই সময়টা। এ নিয়ে অবশ্য কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তবে মাঝেমধ্যে আফসোস লাগে, আরও হয়তো কন্টিনিউ করতে পারতাম, করা উচিতও ছিল।

কী কারণে করলেন না?

আমি সব সময় মনে করি যে যখন কোনো জায়গা সুইটেবল নয়, তখন নিজে থেকে সরে যাওয়া ভালো। এতে মানসম্মান সবকিছু সুন্দরভাবে বজায় থাকে। আমিও তা ভেবেই সরে এসেছিলাম।

যে অঙ্গন আপনাকে এত এত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে, ভালোবাসা দিয়েছে, তা সুইটেবল কেন ছিল না?

আমি যে ধরনের কাজ করতে ইচ্ছুক, যে ধরনের পরিবেশ চাইছিলাম, সেটা ধীরে ধীরে মিস হয়ে যাচ্ছিল। এ জন্য আমিও ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। আমি মনে করেছি, অসম্মানজনক পরিবেশে থাকার চেয়ে গুটিয়ে নেওয়াটাই বেটার।

সেই পরিবেশ এখনো বিরাজমান নাকি উত্তরণ ঘটেছে?

এখন পরিবেশ আরও বেশি খারাপ হয়ে গেছে। একজন ট্রু আর্টিস্টের জন্য শৈল্পিক যে পরিবেশ থাকা দরকার, তার কিচ্ছু নেই। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও এখন যেসব শিল্পী কাজ করছেন, আমি তো তাঁদের কংগ্রাচুলেশন জানাই, স্যালুট জানাই। সত্যিকার অর্থে এখনকার শিল্পীরা কাজ করার সুন্দর কোনো পরিবেশ পাচ্ছেন না। প্রতিমূহূর্তে একজন শিল্পীকে যে ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা একজন প্রকৃত শিল্পীর হওয়াটা মোটেও কাম্য নয়। আমাদের অসাধারণ সব শিল্পী আছেন, কিন্তু তাঁদের বেড়ে ওঠা বা আরও বেশি বিকাশের জন্য যে কর্মপরিবেশ দেওয়া দরকার, তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি।

কোন দিকটার দিকে নজর দিলে কর্মপরিবেশটা আরও ভালো হতো?

একটা বিষয় কি, শিল্প থেকে যখন লাভজনকভাবে ফিডব্যাক না আসবে, তখন এখানে লগ্নি কমে আসবে। আর যখন লগ্নি কমে আসবে, তখন এখানে হানড্রেড পার্সেন্ট প্রফেশনাল লোকজন কমতে থাকবে। আর তখনই নন-টেকনিক্যাল লোকজন এখানে এসে ভিড় জমাবেন। তাঁরা অকারণে মাতবরি করবেন, উল্টাপাল্টা কথা বলবেন। উল্টাপাল্টা ডিসিশন দেবেন, যে ডিসিশন আল্টিমেটলি শিল্পচর্চার জন্য মোটেও পারফেক্ট নয়। তখনই মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এগুলো ঠিক না হলে কখনোই ভালো পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব নয়। এ অঙ্গনে এখন অপেশাদার ও সিনেমা বিষয়ে অশিক্ষিতদের মাতবরি চলছে।

কেন এমনটা বলছেন?

কারণ, সবচেয়ে দুঃখ লাগে, মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পোর্টালে এমন সব লোকজনকে কথা বলতে দেখি এবং তাঁদের এমন সব প্রশ্ন করা হয় আর সেই প্রশ্নের এমন উদ্ভট উত্তর দেন, যে উত্তরে হয়তো সেই লোকের ভিউয়ারস বাড়ে, কনটেন্টটা হয়তো কিছু বেশি মানুষ দেখল, সেখান থেকে হয়তো ২০০–৫০০, এমনকি ৫ হাজার টাকা ইনকাম করলেন; কিন্তু সর্বোপরি ইন্ডাস্ট্রির যে কত বড় ক্ষতি করল, তা তিনি নিজেই বুঝলেন না। যে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, আলমগীর কুমকুম, রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীর, সোহেল রানা, শাবানা, ববিতা ও কবরীদের মতো শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজকেরা গর্বের ও অহংকারের জায়গায় নিয়ে গেছেন; সেটার সম্মান কিছু মানুষ তাদের লাভ ও লোভে ধূলিসাৎ করছেন! আমি মাঝেমধ্যে কিছু মানুষের কমেন্ট দেখে হতবাক হয়ে যাই।

কী কমেন্ট?

কিছুদিন আগে চলচ্চিত্রের একজন পরিচালক বলছেন, থাপড়ে নাকি একজন শিল্পীর দাঁত ফেলে দেবেন! হাউ ডেয়ার! এটা তিনি কীভাবে বলতে পারেন! পারসোনালি কাউকে অপছন্দ করলে বা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া থাকলেও সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের কথা বলার ধৃষ্টতা দেখান কী করে! একজন শিল্পী, পরিচালক বা প্রযোজক কিন্তু একদিনে তৈরি হন না। কেউ যদি জেনুইন পরিচালক, প্রযোজক ও শিল্পী হন; তাঁর তো সভ্যতা–ভব্যতার জ্ঞান থাকা দরকার। কথা বলায় মার্জিত হওয়া উচিত। টাকা থাকলেই কিন্তু প্রযোজক হওয়া যায় না। একজন পরিচালক হচ্ছেন ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ; তিনি শিল্পী তৈরির কারিগর, কোনো কথা বলার আগে তাঁকে অবশ্যই সংযত হতে হবে। চলচ্চিত্রাঙ্গন একটা ড্রিমি ব্যাপার। স্বপ্নের অঙ্গনের মানুষেরা যদি আজেবাজে কথা বলেন, তাহলে একসময় পাবলিকের কিন্তু এ অঙ্গন নিয়ে কোনো আগ্রহই থাকবে না। তবে প্রতিটা জিনিসের শুরু যেমন আছে, শেষও আছে। এসবেরও শেষ হবে একদিন।

উত্তরণের পথ কীভাবে?

কেউ স্বীকার করেন বা না করেন, শাকিব খান তো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়। তার মতো একজন শিল্পীকে নিয়ে এভাবে কথা বলেন কীভাবে একজন সিনিয়র পরিচালক! একজন শিল্পী দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে। সেই শিল্পীর ব্যাপারে কারও ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকলে তো তা পাবলিক প্ল্যাটফর্মে কেউ বলতে পারেন না! এখন একটা সংস্কৃতি চালু হয়েছে, আমরা অন্যকে অপমান করে নিজে আনন্দিত হওয়ার কথা ভাবছি। অন্যকে অপমান করে নিজে উল্লসিত হতে চাই, এতে যে নিজেকেই উল্টো হাসির পাত্র হতে হচ্ছে, তা বুঝতে পারছেন না তাঁরা। এর আগে তিনি দীঘি, বাপ্পী ও সাইমনকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেছেন! এসব আমার কাছে খুবই দুঃখজনক মনে হয়েছে।

তাহলে করণীয় কী?

যাঁরা এসব কথা বলে বেড়ান, তাঁরা কাজে না ফিরলে এটার গতি হবে না। আপনি দেখবেন, ছোট্ট সংসারে স্বামী যদি বেকার হন, স্ত্রী যতই ভালো হোন না কেন, দুই দিন পর ঠিকই খোঁটাখুঁটি শুরু হয়। এটা সামাজিক বাস্তবতা। স্বামী বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকলে অযথাই বউয়ের ভুল ধরবেন, সন্তানের ভুল ধরবেন, আস্তে আস্তে পাশের বাড়ির লোকজনেরও ভুল ধরা শুরু করবেন। কর্মহীনতাই পরিবেশটা নষ্ট করেছে। চলচ্চিত্রে বেশির ভাগ বেকার মানুষ গুটিকয় কাজের মানুষকে ডিস্টার্ব করছেন। অথচ অন্যদের নিয়ে অকারণ কথা না বলে, তাঁরা যদি নিজেদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন, কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করতেন, সময়ের সঙ্গে নিজেদের আপ টু ডে করতে পারতেন, তবে তাঁরাও ভালো থাকতে পারতেন। একটা কথা সত্য, অন্যের পেছনে লেগে কেউ কোনো দিন ভালো থাকতে পারেন না। এতে করে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হচ্ছে, সিনেমায় বিনিয়োগের পরিবেশটাও নষ্ট হচ্ছে।

চলচ্চিত্রে ফিরবেন কবে?

আমি তো সিনেমা ছেড়ে যাইনি। চলে গেলেই না ফেরার প্রশ্ন আসত। ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে অবশ্যই করব। কারণ, সিনেমা থেকে আমিন খানের জন্ম। দেশে ও বাইরে যাঁরাই আমাকে চেনেন, এই ফিল্মের কারণেই। আমি একটা করপোরেট প্রতিষ্ঠানে যে এত বড় একটা পোস্টে আছি, এটা কিন্তু শিল্পী আমিন খানের কারণেই। সুতরাং এটাকে অস্বীকার করার কোনো ওয়ে নেই। নো ওয়ে।

আপনার পরিবারের খবর বলুন।

আমার দুই সন্তান, একজন ক্লাস সেভেনে ও অন্যজন কেজি টুতে পড়ে। দুই সন্তান, তাদের মা—এই নিয়ে আমার সুন্দর সুখের সংসার।

বর্তমান সময়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে এক সংকটময় পরিস্তিতি বিরাজ করছে। এবং এই মাধ্যমের অনেক জনপ্রিয় ও সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও নিজেকে আড়াল করেছেন। এমনকি কেউ কেউ দেশ ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। আবারও কেউ কেউ বিনোদন জগত ছেড়ে অন্য নানা ধরনের পেশায়ও যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ভাল মানের কাজের অভাবে দর্শকরা জল বিমুখ হয়ে পরেছে। তবে তরুন প্রজন্মের অনেকেই এই চলমান সংকট মোকাবিলায় বিশেষ ভাবে কাজ করছে। এবং বাংলাদেশ সরকারও এই খাতকে দর্শক মুখী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।

About

Check Also

গোপনে বিয়ে করলেন তৌহিদ আফ্রিদি, জানা গেল কনের পরিচয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যখন সারা দেশের মানুষ ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তখন বেশ নিরব ছিলেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *