সম্প্রতি গত বৃহস্পতিবার ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় যেন শোকের কালো ছায়ায় ঢেকে গেছে গোটা দেশ। স্বজনদের আহাজারিতে রীতিমতো ভারি হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির আকাশ। জানা গেছে, এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ এর অধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। এদিকে ঘটনার দিন থেকেই রীতিমতো উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কর্মীরা।
এদিকে এই দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক আইনজীবী দম্পতি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, মাঝ নদীতে হঠাৎ লঞ্চে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমশ দোতলায় কেবিনের দিক এগিয়ে আসছে। লঞ্চ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে নদীতে পড়ছে যাত্রীরা। অপর দিকে যাত্রীদের কান্না ও চিৎকারে যাত্রীরা ছুটাছুটি করছে।
তারা বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমডি আনিসুর রহমান ও তার সহধর্মিণী। কেবিন থেকে ব্যাগ ফেলে দ্রুত বেরিয়ে নিচে লঞ্চের সামনে চলে আসেন তারা।
এমডি আনিসুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত অনুমান ৩টার দিকে লঞ্চে আগুন লাগে। ইঞ্জিনরুম থেকে আগুন দ্রুত পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় পুরো লঞ্চ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় লঞ্চের ডেকে হুড়োহুড়ি শুরু হয়।
প্রাণ বাঁচাতে অনেকে নদীতে ঝাঁপ দেয়। আমরা যারা কেবিনে ঘুমিয়ে ছিলাম, তারা চিৎকার শুনে বের হয়ে চারদিকে ছোটাছুটি করতে থাকি। ধাক্কাধাক্কি ও পদদলিত হয়ে অনেকে আহত হয়। পুরো লঞ্চের যাত্রীরা ডাক-চিৎকার আর আর্তনাদ করতে থাকে। যে যেভাবে পেরেছে নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। অনেকে স্বজনদের রেখেই ঝাঁপ দিয়েছে নদীতে।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যাগ কেবিনে রেখে স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগটি নিয়ে দাড়িয়ে থাকি। দ্রুত আমাদের কাছে অনেক লোক জড়ো হয়। লঞ্চের পিছনে দোতলা ও তৃতীয় তলায় তখন আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আমি প্রথমে আমার বড় ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা রাসেলকে ফোন দেই। তার ফোন বন্ধ পাই। পরে ছোট ছেলেকে ফোন দিয়ে বলি বাবা আমরা বিপদে পরেছি। তোদের সাথে আর আমাদের দেখা নাও হতে পারে। লঞ্চে আগুন লেগেছে।
ওই আইনজীবী বলেন, আস্তে আস্তে লঞ্চটি কিনারে ভিরে। আমরা নিরাপদে কিনারে উঠলেও অনেক যাত্রী নদীতে ঝাপ দিয়ে পরে। অনেক যাত্রী নদীতে পরে উল্টো দিক সাতার দেয়। আমি কিনারে উঠে বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেনকে ফোনে জানাই। তিনি বরগুনায় পুলিশ সুপার ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছেন। আমরা যারা বেঁচে আছি ওই রাতে ওখানকার ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের একটি স্কুল ঘরে আশ্রয় দেয়। ভোর রাতে একটি ট্রলারে আমরা ঝালকাঠি হয়ে বরগুনা আসি।
এ ঘটনায় লঞ্চ মালিকদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, তা রীতিমতো খুতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় অনেক হতাহতের আশঙ্কা করেছেন কেউ কেউ। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ দুর্ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। প্রিয়জনদের সন্ধান পেতে অস্থির হয়ে আছেন তারা।