বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এই টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেন বিসিবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানের স্ত্রী সাবিনা আকরাম। আর সেখানে তিনি নিশ্চিত করেন, বিসিবির এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আর থাকছেন না আকরাম খান। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকরাম খান নিজেও মিডিয়ার সামনে একই কথাই বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘আমি পাপন ভাইকে অনুরোধ করবো আমাকে যেন আর ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটিতে না রাখেন।’
দেশের ক্রিকেটের সফল অধিনায়ক ও গত ৮ বছর ধরে যিনি জাতীয় দল পরিচালনা ও পরিচর্যা এবং তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে নিয়োজিত, সেই আকরাম খান হঠাৎ ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধানের পদ ছাড়তে চাচ্ছেন- এমন খবরে রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ক্রিকেট পাড়ায়।
এর পেছনের কাহিনী কী? তা নিয়েও আছে নানা গুঞ্জন। জল্পনা-কল্পনা। এ ব্যাপারে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের ভাষ্য কী? তিনি কী ভাবছেন?
সত্যিই আকরাম থাকছেন না বিসিবির নতুন ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটিতে? কৌতুহলি প্রশ্ন সবার কাছে। আজ দুপুর গড়িয়ে বিকেল নাগাদ পুরোপুরি না হলেও তার আংশিক উত্তর মিলেছে। খোদ বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনই দিয়েছেন সেই জবাব।
বুধবার বিকেলে শেরে বাংলায় এক জনাকীর্ণ সংবাদ সন্মেলনে অনেক কথার ভিড়ে পাপন জানিয়েছেন, আকরাম ইস্যুতে কমিউনিকিশন গ্যাপ আছে। তার ব্যাখ্যা, ‘প্রথম কথা হচ্ছে আমরা এখনো কমিটি করে কাউকে দায়িত্ব দেইনি। নতুন কোনো কমিটি বানাইনি। আমাদের নির্বাচিত পরিচালক পর্ষদ দায়িত্ব নেবার পর এখনও কোন স্ট্যান্ডিং কমিটিই নেই। কোন কমিটি হয়নি। যেটা ছিল সেটা শেষ। এখন তারা আগামী পরশু ২৪ ডিসেম্বর বসে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের নাম চূড়ান্ত করবেন। তখন দেখা যাবে।’
তার আগে আকরাম খান তাকে অনুরোধ করেছেন ক্রিকেট অপসে না রেখে অন্যত্র দিতে। কেন আকরাম ক্রিকেট অপসে থাকতে চান না ? এ সম্পর্কে বিসিবি সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘আমাদের এখন কোন স্ট্যান্ডিং কমিটি নেই। আকরাম এ অন্তবর্তীকালীন সময়টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমিও আপনাদের মিডিয়ায় দেখে ভাবলাম সে, এই সময়টায়ও থাকতে চাচ্ছে না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কী এই অন্তর্বতীকালীন সময়েও কাজ চালাবে না? আকরাম বলেছে, নাহ তা কেন? এ সময়ে সে থাকবে।’
তাহলে যখন নতুন স্ট্যান্ডিং কমিটি হবে, তাতে আকরামের থাকার সম্ভাবনা কতটা? আপনি কী ভাবছেন? এ প্রশ্নের জবাবে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘আমি তো এখনো চিন্তাই করিনি। ছেড়ে দেয়া বড় কথা না। কাকে দিব, সেটাই বড় কথা। আগে ২৪ ডিসেম্বর আসুক। তখন বসে দেখা যাবে। আমরা সেদিন বসে ঠিক করবো।’
এটুকু বলে আরও যোগ করেন বিসিবি বস, ‘আমরা ইচ্ছা প্রকাশ করলাম ২৪ তারিখ কমিটি ঘোষণা করবো। আর ২৪ ডিসেম্বর স্ট্যান্ডিং কমিটির রূপরেখা চূড়ান্ত করবো। অন্তত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান-এর নাম দিতে চেষ্টা করবো।
এর ১৫ দিনের মধ্যে স্ট্যান্ডিং কমিটি করে ফেলবো। আমাদের নতুন কয়েকজন ডিরেক্টর এসেছেন, যারা চলে গেছেন তাদের তো চেঞ্জ হবেই। একটা সম্ভাবনা কিছু রদবদল হবার।’
আকরাম খানের সঙ্গে তার কী কথা হয়েছে ? আকরামের ইচ্ছে কী? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘এমন না যে সে ছেড়ে দিচ্ছে, ছেড়ে দেবে। করবে না। অমন কিছু না। সে তার প্রবলেমের কথা বলেছে। বায়ো বাবলের জন্য তার কাজটা অনেক বেশি কঠিন ও জটিল হয়ে গেছে। সে মনে করছে এখনকার পরিস্থিতিতে তার জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারন তার ফ্যামিলি অ্যান্ড আদার্স সময় দিতে হবে।’
আর আকরাম তাকে বলছে, ‘সে আগামীতে ক্রিকেট অপসের মত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক বেশি সময় দিতে হয় যেখানে, সেখানে থাকতে ইচ্ছুক নয়। তাকে অন্য জায়গায় দিতে অনুরোধ করেছে।
এটা বাদ দিয়ে অন্য কোন জায়গায় দিলে তার কোন আপত্তি নেই। থাকবো না তা না। এটাতে যতটা সময় দেয়া দরকার , তা তারজন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কাজেই তার প্রেফারেন্স হলো অন্য জায়গায় দিলে তার কোন আপত্তি নেই। থাকবো না- অমুক না। অমাকে বলেছে আপনি যেটা বলবেন , সেটাই ফাইনাল।
আকরাম ইস্যুতে পাপনের শেষ কথা হলো , আমি একটি ব্যাপার খেয়াল করেছি যে এখন বিশেষ করে বায়ো বাবল সিচ্যুয়েশনে আকরামের কাজটা সহজ না। অনেক কঠিন হয়ে গেছে। এখন ক্রিকেট অপস পরিচালনা আগের চেয়ে টাফ। অনেক বেশি সময় দিতে হয়। আমি চাই এমন কাউকে যে সময় দিতে পারবে এবং নিজের কাজ করার ইচ্ছে আছে।
তবে সম্প্রতি আকরাম খানের এমন সিদ্ধান্তে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে পড়েছেন অনেকেই। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এমন কি হলো যে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস’র প্রধান’র পদ থেকে তিনি এখনই পদত্যাগ করতে চাচ্ছেন? এছাড়াও নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজে বেড়াচ্ছেন তারা।