Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / গবেষনায় উঠে এলো গত ১১ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক মোট ক্ষতির পরিমান

গবেষনায় উঠে এলো গত ১১ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক মোট ক্ষতির পরিমান

সড়কে দূর্ঘটনা বাংলাদেশের নিত্যেদিনের ঘটনায় পরিনত হয়েছে। প্রায় সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়কে মারাত্মক দূর্ঘটান ঘটছে। এতে করে প্রাননাশও হচ্ছে। এমনকি সৃষ্টি হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষতি। সম্প্রতি এক গবেষনায় উঠে এসেছে দেশে গত ১১ মাসে সড়কে কী পরিমান আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই জরিপটি করেছে বাংলাদেশের বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্র।

দেশের সড়কে হতাহত ও মৃ/ত্যু/র মিছিল নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ক্ষতি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থের। ২০১৮ সালের পর চলতি বছরের নভেম্বরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারো ছাত্র বি/ক্ষো/ভ হয়েছে। দাবি পুরনোই- নিরাপদ সড়ক চাই। কিন্তু পরিস্থিতির দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন নেই। উল্টো দিনের পর দিন দুর্ঘটনায় বাড়ছে আর্থিক ক্ষতি। বুয়েটের দুর্ঘ/ট/না গবেষণা কেন্দ্রের (এআরআই) একটি গবেষণা বলছে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে সড়কে দুর্ঘ/ট/না ঘটেছে ২ হাজার ৩৯৭ টি। এ সময় মা/রা গেছে ৩ হাজার ৪৬৯ জন এবং আ/হ/ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৮৮ জন। এতে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) এই ক্ষতির পরিমাণ ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর মাসে গড় হিসেবে এই ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। গবেষক ও দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান ধারণা করছেন, বছর শেষে এ ক্ষতি ৩৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কগুলোতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা প্রণয়ন, চালকদের দক্ষতা বাড়ানো এবং পথচারীদের সচেতনতার পাশাপাশি মহাসড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, পদ্মা সেতু তৈরিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার কিছুটা বেশি ব্যয় হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয় তা পদ্মা সেতুর ব্যয় থেকে অনেক বেশি। ফলে দুর্ঘটনা যদি কমিয়ে আনা যায় তাহলে পদ্মা সেতুর মতো আরেকটি সেতু তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন এআরআই পরিচালক। যদিও ২০২০ সালে করোনার মধ্যেও সড়কে আর্থিক ক্ষতি প্রায় কাছাকাছি ছিল। ওই বছর ৩ হাজার ৬৪টি দুর্ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ৩২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১ দশমিক ২০ শতাংশ। ওই বছর নি/হ/ত হয়েছিল ৪ হাজার ৩৫৮ জন এবং আ/হ/ত হয়েছিল ৪ হাজার ৪৫০ জন। আর ২০১৯ সালে সড়কে দুর্ঘ/ট/না ঘটেছিল প্রায় চার হাজার। এতে ক্ষতি হয়েছিল ৩৮ হাজার ৯৬ কোটি টাকার। অর্থাৎ, জিডিপিতে এই ক্ষতির পরিমাণ দেড় শতাংশ। ওই বছর ৩ হাজার ৯৩৭ টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল ৪ হাজার ৩৫৮ জন। আহত হয়েছিল ৭ হাজার ২৪০ জন। অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান জানান, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে ২৫ শতাংশ দু/র্ঘ/টনা ঘটে। এ সময় কুয়াশার কারণে মুখোমুখি দুর্ঘটনার চেয়ে পেছন থেকে আ/ঘা/তের ঘটনা ঘটছে বেশি। এতে মৃ/ত্যু/র সংখ্যা বাড়ছে। আর এসব সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সিদের মৃ/ত্যু/র হার সবচেয়ে বেশি। ড. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়ক দুর্ঘনায় প্রতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি’র দেড় শতাংশের মতো ক্ষতি হয়। তবে এই ক্ষতি বাস্তবে আরও বেশি। কারণ, যেসব দুর্ঘটনার কোনো রেকর্ড থাকে না সেসবের হিসেবও এখানে উঠে আসে না।

আর্থিক ক্ষতি যেভাবে হিসেব করা হয়েছে:

অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান জানান, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার কোনো ব্যক্তির গড় বয়স, উৎপাদন ক্ষমতা, তার আর্থিক মূল্যের হিসেব করে এটি পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘যারা আ/হ/ত বা নি/হ/ত হন তাদের নমুনা থেকে গড় বয়স বের করার পর সারাজীবনে তাদের গড় আয় কত হতে পারে- সেটির একটি ধারণা পাওয়া যায়। সেখান থেকে দুর্ঘটনার জন্য যত বছর নষ্ট হলো, তার ভিত্তিতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বের করা হয়েছে।’ এই গবেষক বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর। একজন মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে ৬৫ বছর পর্যন্ত অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি নি/হ/ত ও আ/হ/ত হচ্ছেন। এই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিরা যখন ঝড়ে পড়ে তখন অর্থনীতি ক্ষতিতে পড়ে।’

অন্যদিকে, আ/হ/ত/দের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পর যতদিন কোনো ব্যক্তিকে কাজ থেকে দূরে থাকতে হয়, তার সঙ্গে তার দৈনিক আয়কে গুণ করে ওই কয়দিনের আর্থিক ক্ষতির হিসেব বের করা হয়। এরসঙ্গে যখন কেউ নিহত বা আহত হয় তখন তাদের পরিবারের সদস্যদের ভগ্ন হৃদয় থাকায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেটিও ধরা হয়। আবার আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করলে ওই পরিবারের সদস্যরা ওই ব্যক্তির পেছনে সময় ব্যয় করে। এতে অর্থনীতিতে তাদের অবদান কমে যাচ্ছে। এসব বিষয় ধরেই আর্থিক ক্ষতি হিসেব করা হয়েছে বলে জানান এআরআই পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান। এছাড়া, যেসব দুর্ঘটনার কোন রেকর্ড পু/লি/শে/র খাতায় থাকে না সেসব হিসেব অধরাই থেকে যায় বলে জানান বুয়েটের এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই পুলিশের খাতায় উঠে না। ওই বিষয়ে মামলাও হয় খুব কম। সেখানকার আ/হ/তে/র হিসেবও থাকে না। তাই প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।’ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সব দু/র্ঘ/ট/না/কে নথিভুক্ত করার আহ্বান জানান ড. হাদিউজ্জামান।

বর্তমান বাংলাদেশ সরকার সড়কের দূর্ঘটনা প্রতিরোধে নিরলস ভাবে কজা করছেন। এমনকি এই খাতে নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বেহস কিছু আইনও প্রনয়ন করেছে। শুধু তাই নয় অনিয়মকারীদের জন্য জারি করেছে কঠোর শাস্তির বিধান। অবশ্যে সড়কে দূর্ঘটনা প্রতিরোধে পরিবহন চালক এবং যাত্রীদের উভয়কেই সচেতনতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি।

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *