বর্তমান সময়ে সমগ্র দেশ জুড়ে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দল ও বিএনপি দল সহ আরও অনেক দলের নির্বাচিত প্রার্থী অংশগ্রহন করছে। তবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। এবার তাদের মোট সম্পত্তির পরিমান উঠে এসেছে প্রকাশ্যে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নিজ নামে গাড়ি-বাড়ি বা জমি নেই। নগদ এক লাখ ৬৬ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা ও ৩০ হাজার টাকা মূল্যমানের অলঙ্কার ছাড়া তার আর কোনো সম্পদ নেই। পাশাপাশি নেই কোনো ব্যাংক ঋণ বা দায়দেনাও। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। অপরদিকে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে রয়েছে ১০টি মামলা। যদিও তিনি এসব মামলাকে রাজনৈতিক বলে দাবি করেছেন। প্রতিপক্ষের তুলনায় তার সম্পদ ও টাকার পরিমাণও বেশি। তৈমুরের রয়েছে নগদ পাঁচ লাখ টাকা, রাজউকের পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লট, ৪৫ শতাংশ কৃষিজমি, ৬ দশমিক ৬ শতাংশ অকৃষিজমি ও পাঁচ ভরি স্বর্ণ। তবে নেই কোনো গাড়ি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় তারা এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আরও জানা গেছে, এ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সোমবার যাচাই-বাছাইয়ে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী-মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ ও মো, কামরুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। টিকে রয়েছেন ছয়জন মেয়র প্রার্থী।
বাতিল হওয়া দুই প্রার্থীর প্রার্থিতার সমর্থনে জমা দেওয়া তিনশ জন ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়ায় তা বাতিল হয়। বাকি ছয়জন প্রার্থীর পাঁচজনই উচ্চশিক্ষিত। তাদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বাকি চারজনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। একজনের ব্যাংক ঋণ রয়েছে। বাকি কোনো প্রার্থীর ব্যাংক ঋণও নেই। আগামী ১৬ জানুয়ারি এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীরা স্বেচ্ছায় সাত ধরনের তথ্য হলফনামা আকারে জমা দিয়েছেন। হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে নির্বাচিত হওয়ার পরও তা বাতিলের বিধান রয়েছে। এ নির্বাচনে বৈধ মেয়র প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস। হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য -ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী। পেশায় তিনি চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই।
অতীতেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। মেয়র হিসাবে সম্মানী ছাড়া তার আর কোনো আয়ের উৎস নেই। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে তিনি বছরে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা সম্মানী পেয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন মেয়র হিসাবে দায়িত্বে থাকা এ প্রার্থীর হাতে নগদ টাকা রয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৪০১ টাকা। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ২৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। আছে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ ও অলংকার। তার কোনো দায়দেনা বা ব্যাংক লোন নেই। নিজের নামে গাড়ি, বাড়ি ও জমি নেই। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর নির্ভরশীলদের আয়, সম্পদ ও দায় নেই বলেও উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। ২০১১ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে থাকা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সম্পদ গত নির্বাচনের চেয়ে এবার আরও কমেছে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হলফনামায় তার হাতে নগদ টাকা ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবার নগদ টাকার পরিমাণ এক লাখ ৬৬ হাজার ৪০১ টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকে জমা ছিল ১০ লাখ টাকা। স্বর্ণ ও অন্য অলংকার ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ২ লাখ টাকার। আসবাবপত্র ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার। যৌথ মালিকানার ১২ শতাংশ অকৃষিজমির ৮ ভাগের ১ ভাগের মালিকও ছিলেন তিনি।
তবে এবারের হলফনামায় ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং কৃষি ও অকৃষিজমির স্থলে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করেছেন। ২০১৬ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। বাড়ি-জমি না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সোমবার বলেন, আমার নামে জমি ছিল তা সাফকাবলা দান করেছি। তাই এখন আর জমি নেই। আমার নামে বাড়ি বা গাড়িও নেই। আমি যেই বাড়িতে থাকি তা আমার পৈতৃক সম্পত্তি। ওই বাড়ি আমার দুই ভাইয়ের নামে রয়েছে। তাই আমি হলফনামায় বাড়ি-গাড়ি নেই বলে উল্লেখ করেছি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার পেশায় আইনজীবী। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে ১০টি। অতীতে মামলা ছিল ২০টি। হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে তা রাজনৈতিক কারণে দায়ের করা হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেননি। বর্তমানে এ মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটিই বিচারাধীন, তিনটি উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত ও দুটি চার্জ শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলা ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের হয়েছে।
প্রায় সব মামলায় তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, হাঙ্গা-দাঙ্গামা করা, বেআইনি সমাবেশে অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অতীতে তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা দায়ের হয়। ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওইসব মামলা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে অন্তত সাতটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে দায়ের করা হয়। অতীতের ২০টি মামলার মধ্যে দুটি হাইকোর্টে বিচারাধীন ও সাতটি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রত্যাহার করা হয়। অবশিষ্ট মামলাগুলোর চারটি উচ্চ আদালতে স্থগিত ও বাকিগুলোতে অব্যাহতি পেয়েছেন। তৈমুর আলম খন্দকারের বার্ষিক আয় ৮ লাখ টাকার বেশি। বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে ভাড়া পেয়ে থাকেন ৫ লাখ ৭৪ হাজার ১৪১ টাকা, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ ব্যাংক আমানত থেকে আয় ২ হাজার ৫০০ টাকা ও আইন পেশা থেকে পান ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তার নগদ টাকার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা ও স্ত্রীর আছে দুই লাখ টাকা। তার ৫ ভরি স্বর্ণ ও স্ত্রীর ১২ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এই পাঁচ ভরি স্বর্ণের পুরোটাই উপহার পেয়েছেন। এছাড়া আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি রয়েছে।
এছাড়া রাজউক থেকে পাওয়া ৫ কাঠার প্লট ও ২৭৬ বর্গমিটার আয়তনের নির্মাণাধীন বাড়ি রয়েছে তার। যৌথ মালিকানায় থাকা ২০০ শতাংশ কৃষিজমি ও ৩০ শতাংশ অকৃষিজমির ২২ শতাংশ মালিকানাও আছে তার। এ প্রার্থীর কোনো ব্যাংক লোন ও দায়দেনা নেই। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার। ওই নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় বিসিকে একটি প্লট এবং স্ত্রীর নামে রাজধানীর সেগুনাবাগিচায় দুটি ফ্ল্যাট ও তোপখানার মেহরাব প্লাজায় একটি স্যুট ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। বিসিকের ওই প্লটটির দাম এক লাখ ২৪ হাজার টাকা ও স্ত্রীর দুটি ফ্ল্যাট ও একটি স্যুটের দাম ৩৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা উল্লেখ করেছিলেন। এবারের হলফনামায় ওইসব সম্পদ উল্লেখ করেননি তিনি। তবে স্ত্রীর নামে ৩১৪ বর্গমিটার আয়তনের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, বিসিকের প্লটটি বিক্রি করে দিয়েছি। স্ত্রী তার পৈতিৃক সূত্রে যে দুটি ফ্ল্যাট ও একটি স্যুট পেয়েছেন তা তার নামের আয়করে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, আগেও পৈতৃক সম্পদ বিক্রি করে নির্বাচন করেছি, এবারও তাই করব।
বিএনপি দল দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে একটি হলেও বর্তমনা সময়ে এই দলটি এক সংকটময় পরিস্তিতির মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। তবে এই দলটি চলমান সকল সংকট নিরসনের লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করছে। এই দলটির বিরুদ্ধে আওভিযোগ রয়েছে চলমান দেশের বিভিন্ন বিভিন্ন জেলার ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করছে দলীয় প্রতীক থেকে বেরিয়ে।