Wednesday , November 13 2024
Breaking News
Home / Countrywide / অসুস্থ বাবার সঙ্গে হাসপাতালেই রাত কাটে সার্জেন্ট মহুয়ার

অসুস্থ বাবার সঙ্গে হাসপাতালেই রাত কাটে সার্জেন্ট মহুয়ার

চলতি মাসের গত ২ ডিসেম্বর মধ্য রাতে রাজধানী ঢাকার বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী সড়কে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে এই মুহুর্তে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং। জানা গেছে, এরই মধ্যে নিজের একটি পা’ও হারিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা বেশ গুরুতর বলে জানা গেছে। এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে অসুস্থ বাবার সঙ্গে হাসপাতালেই রাত কাটছে তার। গত ২রা ডিসেম্বর মধ্যরাতে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছেন তার বাবা। ঘাতক বিএমডব্লিউ গাড়ির ধাক্কায় তার বাবা আহত মনোরঞ্জনকে দুই দফা অস্ত্রোপচারের পর তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়ে এখন রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন বিজিবির সাবেক এই হাবিলদার। সূত্রমতে, দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের পর শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন মনোরঞ্জন হাজং। ঊর্ধ্বতনদের নিষেধ থাকায় মনোরঞ্জনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি তার পরিবার।

সূত্র জানায়, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে মহুয়াকে। হাসপাতালের মধ্যেই বসানো হয়েছে পুলিশি পাহারা। রাখা হচ্ছে নজরদারি।
২০০৪ সালে বিজিবি থেকে অবসরে যান মনোরঞ্জন হাজং। তিনি বনানীর একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মনোরঞ্জনের একমাত্র মেয়ে মহুয়া হাজং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সার্জেন্ট। মহুয়ার চাকরির বয়স ৩ বছর। ভাই মৃত্যুঞ্জয় হাজং পড়াশোনা করছেন। বাবার পেনশন, মহুয়া ও বাবার চাকরির আয়ে সংসার চলছিল তাদের।
এদিকে, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মহুয়ার পরিবার। দুর্ঘটনায় বাবার পা হারানোর বিচার চেয়ে গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট বাহিনীতে চাপের মুখে পড়েছেন সার্জেন্ট মহুয়া হাজং। গণমাধ্যমে কথা না বলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে তাকে। এই ঘটনায় শুরুতে মামলাই নিতে চায়নি পুলিশ। এক বিচারপতির ছেলে হওয়ায় গাড়িচালক সাঈদ হাসানের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা খোদ পুলিশই নেয়নি। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর গত ১৬ই ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮ ও ১০৫ ধারায় সার্জেন্ট মহুয়ার মামলা রেকর্ড করে বনানী থানা। সেখানে গাড়ির চালক সাঈদ হাসানের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা দু’জনকে আসামি দেখানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে চালকের আসনে ছিলেন সাইফ হাসান। তার স্ত্রী অন্তরা সাইফ আর বন্ধু রোয়াদ। দুর্ঘটনার পরই প্রভাবশালীদের চাপে গাড়ি ও এর যাত্রীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। একইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মহুয়া হাজংয়ের সঙ্গে আপসের চেষ্টা করা হয় কয়েক দফায়। এর দুইদিন আগে ১৪ই ডিসেম্বর সেই গাড়ির চালক সাঈদ হাসান বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে দুর্ঘটনার জন্য ‘উল্টো পথে থাকা’ মোটরসাইকেল আরোহী মনোরঞ্জন হাজংকেই দায়ী করেন তিনি। পুলিশ যেখানে ১৪ই ডিসেম্বর সেই গাড়ির চালক কে ছিলেন জেনেও ১৬ই ডিসেম্বর মহুয়ার মামলায় চালককে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দেখায়।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহুয়ার বাবার দুর্ঘটনার বিষয়ে চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে ‘জাস্টিস ফর মহুয়া। জাস্টিস ফর ফাদার।’ ফেসবুকে ন্যায়বিচার চেয়ে এমন হ্যাশট্যাগ দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা। পোস্টের সঙ্গে দেখা যায় মহুয়া হাজং ও তার বাবার একটি ছবি। তাদের কেউ মহুয়ার সহকর্মী, কেউ সমব্যথী।
বারডেম হাসপাতালের পরিচালক (প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগ) ফরিদ কবিরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া বলেন, সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের দায়ের করা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এদিকে এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে পুলিশ দাবি করেছেন, গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জনের এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

About

Check Also

কাল নিলেন উপদেষ্টার দায়িত্ব, আজ হলেন আসামি: যা বললেন বশির উদ্দিন

নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন নিজের নামে মামলা প্রসঙ্গে বলেন, “আমি পুরো বিষয়টি স্পষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *