Wednesday , December 25 2024
Breaking News
Home / opinion / সচিব সাহেবকে ধন্যবাদ অকপটে সত্য কথা বলার জন্য: সাবেক নির্বাচন কমিশনার

সচিব সাহেবকে ধন্যবাদ অকপটে সত্য কথা বলার জন্য: সাবেক নির্বাচন কমিশনার

বিশ্বের গনতান্ত্রিক দেশ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বাংলাদেশ। এই দেশে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জন গনের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকে। প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর বাংলাদেশের ভোট কার্য অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এরই সুত্র ধরে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে হঠাৎ করেই বেশ আলোচনা-সমালোচনার শৃষ্টি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা জানালেন ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে ৪০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ও শত শত মানুষ আ/হ/ত হয়েছেন; বিশেষ করে ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচনে অভিনব এবং ব্যাপক কারচুপি হয়েছে, এতে দ্বিমত নেই। শত শত অভিযোগ থাকলেও এই দুই ধাপের নির্বাচন নিয়ে দারুণ তৃপ্ত ছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তৃতীয় দফা নির্বাচন নিয়ে কমিশনের সচিব মহোদয় যে মন্তব্য করেছেন, তা নির্বাচন নিয়ে আগের সব তৃপ্তি ছাড়িয়ে গেছে। তৃতীয় ধাপে ছয়জনের তাৎক্ষণিক মৃ/ত্যু/র (যার মধ্যে আমার জানামতে, প্রথম একজন আধা সা/ম/রিক বিজিবি সদস্যও ছিলেন) পর তিনি বলেছেন, ওই নির্বাচন নাকি ‘মডেল নির্বাচন’ হয়েছে। সচিব সাহেবকে ধন্যবাদ দিতে হয় অকপট সত্য কথা বলার জন্য! এটা মডেল নির্বাচনই বটে! তিনি যদি আগামী কমিশনের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন, তবে এই ‘মডেল নির্বাচনের’ ধারাবাহিকতা দেখা যেতে পারে। সত্যিই তো, গত প্রায় পাঁচ বছর আমরা নানা ধরনের নির্বাচনের মডেল দেখেছি। ২০১৪ সাল থেকে এ ধরনের ‘মডেল নির্বাচন’ শুরু হলেও অন্তত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো সেই মডেল অনুসরণ করেনি। ২০১৪ সালের একতরফা জাতীয় নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের পরিণতি বলে পাশ কাটানো গেলেও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ওই দোহাই দেওয়ার সুযোগ ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এই নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। সে নির্বাচনও ছিল এক অভিনব ‘মডেল’। সেটি ছিল ‘রাতের অন্ধকারের’ নির্বাচন। রাতের অন্ধকারেই বহু জায়গায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এত সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অকাট্য প্রমাণ ও অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন সেসব গায়ে লাগায়নি। সেই নির্বাচন ছিল এমন এক অনন্য মডেল, যার কোনো দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত বিশ্বের আর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে পাওয়া যায় না।

নির্বাচন কমিশনের সচিব মহোদয় যে মডেল নির্বাচনের কথা বলেছেন, তা মডেলই বটে। প্রথমত, বলতে গেলে একতরফা নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ৪৫ মানুষ নি/হ/ত এবং প্রায় ৬০০ মানুষ আ/হ/ত হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব স/হিং/স/তা রোধে নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়দায়িত্ব রয়েছে বা তা ঠেকাতে তারা কোনো ভূমিকা পালন করেছে, এমন নজির দেখা যায়নি। অন্তত তদন্ত করে দোষী ব্যক্তি শনাক্ত এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছেন বা চেষ্টা করেছেন, তেমন কোনো তথ্যও জানা যায় না। অথচ নির্বাচন কমিশনের ওপর আইন দ্বারা এবং সংবিধানের আওতায় প্রচুর ক্ষমতা অর্পিত রয়েছে। সেসব আইন ও অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ করলে হয়তো এ ধরনের জটিল এবং অকার্যকর নির্বাচনী ‘মডেল’ তৈরি হতো না। শুধু বিগত তিন ধাপের নির্বাচনেই হানাহানি, মা/রা/মা/রি, ব্যালট বাক্স ছি/ন/তা/ই, ভুয়া ভোট প্রদান হয়নি; ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাদের বক্তব্য তো সব সময়ই একটি, অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ব্যবস্থার কোনো নমুনা বিগত কয়েক বছরে অন্তত পত্রপত্রিকায় দেখা যায়নি। কমিশন এ পর্যন্ত কতজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। আমরা দেখছি, প্রতিটি নির্বাচনেই নতুনত্ব আসছে। তাই প্রতিটি নির্বাচনই একেকটি মডেল নির্বাচন। এখন বুথ বা কেন্দ্র দখল নয়। এখন নতুন কায়দার নাম ‘সিল দখল’। এবারের ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত যা দেখা গেল তাতে এটা স্পষ্ট যে প্রধানত যাঁরা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁরা স্থানীয় সাংসদ ও প্রভাবশালী নেতাদের সমর্থনে তা পেয়েছেন। ওই পদেই প্রতীক দেওয়া হয়। মনে করা হয়, প্রতীক মানেই নির্বাচিত। স্মরণযোগ্য, চেয়ারম্যান পদ ছাড়া অন্যান্য পদকে গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছে, সেসব পদে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয় না। উন্মুক্ত থাকায় ওই সব পদে মোটামুটি ভোটাভুটি হয়ে থাকে। কাজেই ভোটকেন্দ্রে যত মানুষ দেখা যায়, তাঁদের সিংহভাগ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থীদের সমর্থক। অপর দিকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির কারণে অযোগ্য ব্যক্তিরা মনোনয়ন পান। তাই তাঁর বিরুদ্ধে একই দলের, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক ব্যক্তি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন এবং সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিকে বিজয়ী করতে নানান কৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায়, যার মধ্যে সিল দখল অন্যতম। সিল দখল করে চেয়ারম্যান পদের ব্যালটে সিল মারা। তবে তঁার প্রতিদ্বন্দ্বীও একই দলের এবং শক্তিশালী হওয়ায় তিনিও একই কায়দায় শক্তি প্রয়োগের উদ্যোগ নেন। এ চিত্রই এখন নির্বাচনের মূল মডেল।

বিগত কয়েক বছর নির্বাচন থেকে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বস্তরের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার যে মডেল তৈরি হয়েছিল, তা বেশ পাকাপোক্ত হয়েছে এ কমিশনের সময়ই। প্রায় সর্বস্তরের নির্বাচনে এখন সংখ্যানুপাতে বড় সংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং হচ্ছেন, যা তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনে বিরল ঘটনা। কেবল তৃতীয় ধাপে ১০০ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এমনকি ৩৩৭ সদস্য এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ১৩২ আসনেও সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগের দুই ধাপেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। এমনকি পুরো পরিষদ বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। যাহোক, চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউনিয়নে নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর ২০২১। যেখানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদে ইভিএম দ্বারা ভোট গ্রহণ করার কথা রয়েছে। এর আগে বহু নির্বাচনে উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু ভোট কারচুপি বন্ধ করা যায়নি। সেখানে আরেক মডেলের নির্বাচনের দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। সাধারণ ভোটার, প্রার্থী এবং জনগণ এ ধরনের কথিত ‘মডেল নির্বাচন’ চান না। তাঁরা যা প্রত্যাশা করেন, সে ধরনের বা তার ধারেকাছের নির্বাচন করতে কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলে অহরহ অভিযোগ উঠছে। যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোকে খতিয়ে দেখে নির্বাচন কমিশনের উচিত আগামী কমিশনের জন্য অন্তত নথিভুক্ত করা। অপর দিকে কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার উদাহরণ রাখতেও অনুরোধ করছি।

কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের দ্বাদশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহনের আহ্বান জানিয়েছেন। এরই সূত্র ধরে দেশের সকল দলের রাজনৈতিক নেতারা আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মেতে উঠেছেন। শুধু তাই নয় আগামী নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে সরকারের কাছে বেহস কিছু দাবিও জানিয়েছে।

About

Check Also

আগামীকাল ঢাকায় বড় কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা, আপাতত যানবাহন তল্লাসি করুন: ইলিয়াস হোসেন

আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন, যারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *