সম্প্রতি জুতা সেলাই করে জীবিকা চালানো একজন মানুষের পাশে বসে খোসগল্পে লিপ্ত হওয়া জাতীয় ক্রিকেট সাবেক অধিক নায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই এরই মধ্যে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, ঐ লোকটি আর কেউ নয়, তিনি মাশরাফির বন্ধুদের মধ্যেই একজন। তার নাম রবি। পেশায় ভিন্ন হলেও তাদের বন্ধুত্ব যেন মুগ্ধ করে সবাইকে।
আর এ ঘটনা যেন মিলে গেছে গুলজার হোসেন উজ্জলের সাথেও।
এ ব্যাপারে তিনি যা লিখেছেন, তা পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো-
শান্তিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার বন্ধু ছিল সোলায়মান। সোলায়মানকে পরে রিকশা চালাতে দেখেছি৷ কুমিল্লাতেও দেখা হয়েছে তার সাথে। দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুন যুবকেরা কুমিল্লা শহরে রিকশা চালাতে আসতো নব্বই দশকের শেষে এবং শূন্য দশকের শুরুতে। এখনকার খবর জানিনা।
নানার বাড়িতে আমাদের সার্বক্ষণিক সংগী ছিল আলুইংগা (আলমগীর)। সেও এখন রিকশা চালায়। মাঝে টেম্পু ধরেছিল। এখন মেশিনবসানো রিকশা।
আমার স্কুলের বন্ধু চা বিক্রি করে। কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, সাইনবোর্ড লিখে। ফটোস্ট্যাটের দোকান, প্রেসের মালিক, কসাই(মাংস বিক্রেতা), ফেন্সিডিল পাচারকারি ইত্যাদি বিবিধ পেশায় নিযুক্ত আছে। ডেপুটি সেক্রেটারি, কলেজ শিক্ষক, আন্তর্জাতিক ব্যাবসায়ী, কর্পোরেট সবই আছে। দিনাজপুর গেলে আড্ডা দিতে খুব ভাল লাগে। বেলালের দোকানে বসে আড্ডা, ওহির চায়ের দোকানে আড্ডা আর কোথাও না পেলে হাইস্কুল মাঠের কোনায় টং দোকানে বসে চা খেতে খেতে আড্ডা দিতে পারলে মনে হয় এই মানবজীবনে অনেক আনন্দ লুকানো আছে। কেবল আহরণ করে নিতে হয়।
আমাদের কান্ত দাদা ছিল জুতা কারিগর। রেল ঘুমটির পাশেই বসত। কান্ত দা খুব আদর নিয়ে কথা বলত আমাদের সাথে। বয়সে আমাদের থেকে খুব বড় ছিলনা। চুল ছিল বেশ কায়দা করে কাটা। গল্প করতে পারত ভাল। মোটামুটি শুদ্ধ উচ্চারণ আর গোছানো কথা । জুতা মেরামতের পাশাপাশি তার পাশে রাখা যন্ত্রপাতির বাক্সটাতে বসে কান্তদার সাথে গল্প করতাম।
বছর পাঁচেক আগে বিরামপুরে গিয়ে শেষবার কান্তদাকে পেয়েছিলাম। দাদাকে দিয়ে জুতা কালি করালাম।
কান্তদা বলল ‘তুমি নাকি ডাক্তার হইছ’?
– হাঁ দাদা।
খুব ভাল। ভাল পজিশনে গেছ।
মাঝে মাঝে জীবনের “ভাল পজিশন” নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাই। এই যে মাশরাফি ভাল পজিশনে গিয়ে একটা বিপদে পড়েছে, বন্ধুর সাথে শান্তিতে গল্প করতে পারছেনা। ফেসবুক জুড়ে ঢিঢি পড়ে গেছে। কেউ বলছে আহা মাশরাফি! কেউ বলছে ‘স্টান্টবাজি’।
আমার বলতে ইচ্ছে করছে “আহারে মাশরাফি! বন্ধুর পাশে বসে গল্প করবার সুখটুকুও নিরংকুশ হতে পারলোনা যে জীবনে সে জীবনে সব হারিয়ে থাকে কেবল একটা ” ভাল পজিশন “।
বর্তমান এ জগতে এমনও অনেকেই রয়েছেন, যারা ভালোটাকে দেখতে না পেরে অনেক সমালোচনা করে বসেন। সম্প্রতি মুচি বন্ধুর সাথে খোসগল্পে লিপ্ত হওয়া মাশরাফির ঐ ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই অনেকেই মাশরাফির সমলোচনায় জড়িছেন।