বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল- ২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। একটা সময়ে ২২ গজের মাঠে যেমন নিজের সেরাটা দেখিয়ে কোটি দর্শকের মনে জায়গা করে নিতেন, ঠিক তেমনই রাজনীতির মাঠেও বেশ সাড়া পেয়েছেন মাশরাফি। কোনো অন্যায়’কেই প্রশ্রয় দেন না তিনি। যখনই কোনো অন্যায়ের অভিযোগ পান, তা প্রতিহত করতে রীতিমতো ঝাপিয়ে পড়েন তিনি। সম্প্রতি আাবারও এমনই একটি ঘটনা ঘটালেন তিনি।
জানা যায়, মহান বিজয় দিবসের দুদিন পর কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ সাত সকালে নড়াইল সদর হাসপাতালে হাজির হন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এ সময় বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলেন তিনি। শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তিনি।
পরিদর্শনকালে চিকিৎসকদের সঠিক সময়ে না আসা, রোগীদের খাবারে অনিয়ম, অনুমোদন ছাড়াই ছুটি ভোগ, টয়লেটের দুরবস্থাসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দেখতে পান। এসব নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় মাশরাফি বিন মর্তুজা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, ৮ লাক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত নড়াইল জেলায় চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতাল। এই হাসপালের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে রোগী ও ভূক্তভোগীরা সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার নিকট অভিযোগ করেন।
হাসপাতালে প্রবেশ করে জরুরী বিভাগে একজন চিকিৎসক ছাড়া আর কোনো চিকিৎসককে দেখতে পাননি তিনি। অফিস টাইম সকাল ৮টা থেকে শুরু হলেও অধিকাংশ চিকিৎসক ৯টার পরে হাসপাতালে প্রবেশ করেছেন।
হাসপাতাল পরিদর্শনকালে রোগীরা অভিযোগ করে, সরকারি বরাদ্দ থাকলেও সঠিকভাবে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। ১০০ জন রোগীর খাবার বরাদ্দ থাকলেও শুক্রবার রাতে ১৫-২০ জন রোগীকে খাবার দেয়া হয়। তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়া হয় না।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমান বাবুসহ অন্য চিকিৎসকরা ছুটিতে থাকলেও ছুটির আবেদনে নেই তত্ত্বাবধায়কের কোনো স্বাক্ষর।
টয়লেটগুলোর দুরবস্থা, নার্সদের উপস্থিতি কমসহ নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাশরাফি। অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনার বিষয় নিয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আসাদ উজ-জামান মুন্সীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
মাশরাফি বিন মর্তুজা পরিদর্শনকালে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে হাসপালালের চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগগুলি নিজের চোখে দেখার জন্য কাউকে না জানিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হই। প্রায় তিনঘণ্টা অবস্থানকালে সাধারণ মানুষের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আসাদ উজ-জামান মুন্সীকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
মাশরাফি বিন মর্তুজার হঠাৎ করে হাসপাতাল পরিদর্শনের বিষয়টি সন্তোষ প্রকাশ করে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এই সফরের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে বলে মনে করছেন সবাই।
এদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাশরাফির রুখে দাড়ানোর খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমতো নেটিজেনদের প্রশংসার জোয়াড়ে ভাসছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এমনই নেতা চান বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।