সম্প্রতি কিছুদিন আগেই জিয়া পরিবার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী থেকে সদ্য পদত্যাগ হওয়া ডা. মুরাদ হাসান যে অশ্লীল মন্তব্য করেছেন এর প্রেক্ষিতে বিরোধী দলের যে কোনো নেতা’ই হোক না কেন, রীতিমতো মেজাজ হারিয়ে বসবেন এটাই স্বাভাবিক। আর এরই ধারাবাহিকতায় এবার ক্ষমা চাইলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
গত কয়েকটি দিন আগেই একটি জনসভায় সদ্যসাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসেনকে নিয়ে ‘অশালীন’ ও শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তা বলেছেন এমন অভিযোগ ওঠার পর একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে ক্ষমা চান তিনি।
সকলের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে ইশরাক বলেছেন, ‘কয়েকদিন আগে একটি সভা হচ্ছিল, সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে আমি আবেগ ধরে রাখতে পারিনি এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং অশালীন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছি একজন সদ্য বিদায়ী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আমাদের যারা দর্শক শ্রোতা রয়েছেন, যারা নিয়মিত দেখেন আমাকে আমার বক্তব্য শোনেন, অনেক মুরব্বী রয়েছেন অনেক নতুন প্রজন্মের ভাইয়েরা বোনেরা রয়েছেন আমি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী যে এই ভুলটি আমার হয়ে গিয়েছে। আমি আগামীতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যেন এই ভুলটি না ঘটে।’
জেষ্ঠ্য নেতাদের সামনে এমন ভুল কাম্য নয় উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, ‘আমি খুব লজ্জিত মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আমাদের পিতৃতুল্য, আমাদের অভিভাবকতুল্য আমাদের মাননীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। দর্শক সারিতেও অনেক মুরব্বীজনেরা ছিলেন। আমি কোনও অযুহাত হিসেবে বলতে চাচ্ছি না, জাস্ট আপনাদেরকে প্রেক্ষাপটটা বর্ণনা করতে চাচ্ছি।’
বিএনপির এই তরুণ নেতা সাময়িক উত্তেজনায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি আসার পথে ও যাওয়ার পথে একটি ভিডিও শুনছিলাম, যেখানে আমাদের নেত্রী। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ, স্পর্শকাতর অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীরা রয়েছে সেই অবস্থায় আমাদেরকে কথাগুলো মন্তব্য গুলো আঘাত করে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। এটি কোনোভাবেই কাম্য না। আমরা নতুন প্রজন্ম যারা রাজনীতিতে আসছি তারা রাজনৈতিক শিষ্টাচার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বলে আসছি, পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিৎ একে অপরের প্রতিসহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিৎ।’
জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়েছেন জানিয়ে ইশরাক বলেন, ‘আমি এও বলছি যে পরবর্তী আমার বক্তব্য শেষ হবার পর বিব্রতবোধ করেছি যে এতোজন মুরব্বী ও এতো টেলিভিশন চ্যানেলের সামনে এসব শব্দ ব্যবহার করেছি। আমি বাসায় আসার পরে আমার মা আমাকে বলেন, আমার দ্বারা গুরুতর ভুল হয়েছে। আমরা ভাইবোনরা যখন বড় হই, আমাদেরকে এই শিক্ষা দিয়েছেন কখনো অশালীন শব্দ না ব্যবহার করতে। সবকিছু মিলে আমি মাননীয় মহাসচিব ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি।’
সবশেষ সাধারণ ভক্ত ও নেটিজেনদের নিকট ক্ষমা চেয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক বলেন, ‘আজকে যারা এই ভিডিওটি দেখছেন আমি তাদের কাছেও ক্ষমা চাইছি। বিশেষ করে আমার কাছে যারা প্রত্যাশা রাখেন সুস্থ ধারার রাজনীতির তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারা আমাকে এই একটি ভুলের জন্য ক্ষমা করে দেবেন এবং আমাকে আমার সার্বিক কর্মকাণ্ড মূল্যায়ণ না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
ইঞ্জিনিয়ার ইশরাকের বক্তব্যের জের ধরে গণমাধ্যমকর্মী সৈয়দ বোরহান কবীর বলেন, ‘মুরাদের বক্তব্যের পর বিএনপি নেতারা যেসব কথাবার্তা বলেছেন তা কি মুরাদের বক্তব্যের চেয়ে কোনো অংশে শালীন? সাদেক হোসেন খোকা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে রাজনীতিতে এসেছে। শুধু বিএনপি নয়, অনেক বুদ্ধিজীবীকে বলতে শুনি ইশরাকের দম আছে, সাহসী। মুরাদের বক্তব্যের পর ইশরাক যে ভাষায় মুরাদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের গালাগালি করলেন তা শ্রবণ-অযোগ্য। এটুকু ছেলে এত নোংরা কথা শিখল কীভাবে? কাউকে তো বলতে শুনলাম না- ‘ইশরাক এটাও অন্যায়। এমন করলে তুমিও তো মুরাদ হবে’। বরং কেউ কেউ ইশরাককে বাহবা দিলেন। বাঃ এক কাজে দুই ফল। আওয়ামী লীগের নেতারা কুকথা বললে তা হবে কুরুচি আর বিএনপি নেতারা একই কথা বললে তা হবে সাহসী!’
এডিটর’স মাইন্ড কলামে আওয়ামী লীগ বললে অপরাধ, বিএনপি বললে প্রতিবাদ শিরোনামে এ মন্তব্য করেন সৈয়দ বোরহান কবীর।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নিজের সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট ফেসবুক লাইভে শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার নাতনী জাইমা রহমানকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেন মুরাদ হাসান। ভিডিও’টিতে তিনি অনেক নেগেটিভ কথা বলায় অবিলম্বে তার পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারের দাবি করে বিএনপি।