যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেম এমন ঘটনা নতুন নয়। তবে এবারের ঘটনাটি একটি ভিন্ন। তিন সন্তানের মা এক ছেলের বয়সী এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তলে যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর যুবককে ফোনে ডেকে নেয় তার বাসায়। ঘটনার সূত্রপাত এক বছর আগে ফে/ সবুকে দুজনের পরিচয় হয়।
ধীরে ধীরে ভালো সম্পর্ক থেকে প্রেমে পড়েন তারা। এমনকি প্রেমের টানে সুনামগঞ্জ থেকে বগুড়ায় আসেন ওই যুবক। বগুড়ায় বাস থেকে নেমে দেখলেন একজন মধ্যবয়সী মহিলা তার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রথম কথোপকথনে মহিলাটি তাকে বলেছিলেন যে তিনি তার প্রেমিকের মা। একথা শুনে যুবক খুশি হল। ভাবলাম প্রেমিকার বাড়ির সবাই রাজি। তাদের বিয়ে কে আটকাবে! মহিলাকে নিয়ে তিনি খুশি মনে বাড়ি চলে গেলেন। তারপর এলো বিপর্যয়। যুবক যা জানতে পারলেন, চোখ কপালে উঠল! তার বান্ধবী আর কেউ নেই! মাঝবয়সী মহিলা নিজেই। তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি আর ফে/ সবুকে প্রেম!
ছেলেটি বুঝতে পেরেছিল যে সে প্রতারিত হয়েছে। কিন্তু তখন তার কিছুই করার ছিল না। তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। এখন তার স্ত্রী ৪০ বছর বয়সী নারী! স্বামী পরিত্যক্ত ওই নারী তিন সন্তানের জননী।
ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউপির পারতেখুর পূর্বপাড়া গ্রামে। যুবককে প্রতারিত করা ওই নারীর নাম সখিনা বেগম। পারতেখুর গ্রামে যুবককে ১৬ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে। তবে ওই নারী বলেছেন, তারা বিবাহিত এবং তাদের সংসার রয়েছে। কিন্তু প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পেতে সারাক্ষণ সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ওই যুবক। তাকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশও তাকে রক্ষা না করে তাকে সেখানে ফেলে রেখে যায়।
ভুক্তভোগীর নাম জয়নাল সাগর ওরফে সোহাগ। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার রাজারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতার নাম ইব্রাহিম হোসেন।
পুলিশ বলছে, ছেলের মতে সোহাগের বয়স ২২ বছর। আর তিনি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন সখিনা বেগমকে। তারা ভালো আছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, সোহাগের বয়স ২০ বছরের বেশি হবে না। অল্প বয়সী ছেলেকে বিয়ে করা দেশের আইন বিরোধী। তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের কাগজপত্রও ভুল। শুধু মৌখিক বিয়ে।
জানা গেছে, গত ৩ জুন বাসে করে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় আসেন সোহাগ। তিনি উপজেলার মাঝিরাবন্দর এলাকায় বাস থেকে নামেন। এ সময় সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সখিনা। তবে সখিনা সে সময় তার পরিচয় গোপন রাখেন। সে সোহাগকে জানায় সে তার প্রেমিকার মা। এভাবে প্রতারণার পর সখিনা সোহাগকে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং ওই দিনই তাকে জোর করে বিয়ে দেয়। এ সময় সোহাগ প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করেও পালাতে পারেনি। একপর্যায়ে শাহজাহানপুরের পারতেখুর পূর্বপাড়া গ্রামের স্থানীয় এক ব্যক্তি সোহাগকে উদ্ধারের জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহাগকে উদ্ধার করেনি।
পারতেখুর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, সোহাগকে জোর করে বিয়ে করেন সখিনা। বিয়ের পর থেকে সোহাগকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি দিনের বেশির ভাগ সময়ই সে ঘরে তালাবদ্ধ থাকে। সোহাগের সাথে যা করা হচ্ছে তা অন্যায়। সখিনা নিজের পরিচয় ও বয়স গোপন করে সোহাগের সাথে প্রেম করেন। পরে সে তাকে বিয়ে করার জন্য প্রতারণা করে এবং তাকে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। গ্রামের কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলেই সোহাগ মুক্তির আবেদন জানায়। প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচতে চায় সোহাগ। 999 থেকে ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও তাকে রক্ষা করেনি।
সখিনা বেগম জানান, তিনি সোহাগকে বিয়ে করেন। এটি তার পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য তার শেষ কথা।
ভুক্তভোগী সোহাগ জানান, তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। পরিচয় ও বয়স গোপন করে সখিনা তাকে বগুড়ায় নিয়ে আসে। পরে সখিনা তাকে জোর করে বিয়ে করে। তার সাথে যা করা হয়েছে এবং করা হচ্ছে তা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। সে এমন বন্দিদশা থেকে মুক্তি চায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নান্নু মিয়া জানান, তিনি জানতেন সখিনা একটি ছেলেকে বিয়ে করেছে। একবার তাকে এটি করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বিকে নিয়ে তিনি সখিনার বাড়িতে যান। এ সময় সখিনা জানান, ছেলেটিকে বিয়ে করেছেন এবং তাকে নিয়ে সংসার করবেন। তারপর তিনি চলে গেলেন। তবে ওই সময় তিনি বিয়ের কাগজপত্র দেখতে পাননি।
শাজাহানপুর থানার ওসি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সোহাগ নামের ওই ছেলেটির বয়স ২২ বছর হবে। তিনি সখিনাকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এরপর সোহাগ ভালো আছেন বলে পুলিশকে জানান। তারা সুখে সংসার করছেন। তাকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়নি। সোহাগ যা খুশি তাই করতে সক্ষম। সোহাগের বাড়িতেও নিয়মিত যোগাযোগ থাকে। এক বছর আগে সখিনার সঙ্গে তার (সোহাগ) পরিচয় হয়। পরে তারা প্রেমে পড়েন। তাকে আটকের অভিযোগ সঠিক নয়।
বিয়ের পর ওই যুবক তার ৪০ বছর বয়সী স্ত্রীর সাথেই রয়েছে। তবে ওই যুবকের দাবি তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সস্থানীয় সূত্রে, পুলিশ শিওর হয় তাকে আটকে রাখা হয়নি। সে ওই নারীর থেকে মুক্তি পেতে এমনটা বলেছে। বিয়েটা বৈধ তাই তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে ফিরে গেছেন। যদি অন্য কোন বিষয় থাকে তহলে থানায় ওই যুবককে জানাতে হবে।