পৃথিবীতে কোন কাজই ছোট কাজ নয়, প্রতিটি কাজই সম্মানের , তবে যখন শোনা যায় সময়ের খাতিরে মানুষকে বাধ্য হয়ে যখন জীবন জীবিকার জন্য নিজের প্রতিভাকে বিসর্জন দিয়ে করে যেতে হয় মামুলি কাজ, তখন সেই ঘটনাটা কারো জন্যই সুখকর নয়।
‘বাটালি হিলের সেই বিকেল কেন আর কাছে আসে না…’ এরপর এলো দেশীয় ব্যান্ড সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ। একের পর এক তরুণ তুর্কি দল উঠে আসছে চট্টগ্রাম ( Chittagong ) থেকে। ‘ব্লু হরনেট’ ব্যান্ডটিও এই গানের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করে।
গানটি যে তরুণ লিখেছেন ও গেয়েছেন তার নাম মনসুর। সঙ্গীতে জীবন দেওয়া সেই সময়ের তরুণ মনসুর বয়সের ভারে পৌছে গেছেন বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে। সঙ্গীত জীবন ছেড়েছে অনেক আগেই। সে অন্য গল্প। তবে হঠাৎ করেই যে দৃশ্য সামনে এসেছে তা বেদনাদায়ক! বিশেষ করে যারা ব্যান্ড সঙ্গীত ভালোবাসেন তারা এত দিন পর মনসুরকে ( Mansur ) দেখে হতবাক। গায়ক এখন পাবলিক টয়লেটের তত্ত্বাবধায়ক।
ভাগ্যের রেখা খুবই বৈচিত্র্যময়। জীবনের হিসাব কবে কোথায় নেওয়া হয় কে জানে? শৈবাল দাসের ( Algae slaves ) ভিডিও থেকে জানা যায়, মনসুর ছোটবেলা থেকেই পাগল। ১৯৮৬ সালে ( ) হাজী মুহাম্মদ মহসিন ( Haji Muhammad Mohsin ) কলেজে পড়ার সময় তিনি তার পাগল বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেন। তারা নিজেরাই গান লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন। ব্যান্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেননি মনসুর। পরিবার থেকে তার দূরত্ব বাড়ে। ব্লু হর্নেট নব্বইয়ের দশকে তাদের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করে। অ্যালবামের ১৪টি গানের মধ্যে মনসুর ৩টি গান লিখেছেন ৩টি গান— ‘বাটালি হিলের সেই বিকেল’, ‘ছোট্ট একটি মেয়ে’, ‘সারাটি রাত’।
জীবনের এক পর্যায়ে মনসুর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ব্যবসায় ক্যারিয়ার গড়ার জন্য তিনি ১৯৯২ সালে ( ) ব্যান্ড ত্যাগ করেন, কিন্তু সাফল্য ছাড়াই। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে সে আর বাড়ি ফেরেনি। তিনি তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তার বিয়েও হয়নি। এরপর ২০১৮ সালে ( ) মনসুর টয়লেট দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। বেতন ৯ হাজার টাকা।
বর্তমানে মনসুর শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত । ফুটপাতকে ঠিকানা করে কাটছে তার জীবন । মনসুর চট্টগ্রাম ( Chittagong ) মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পঞ্চানন আচার্যের ( Panchanan Acharya ) অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ব্যান্ড শিল্পীকে বাঁচাতে প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা।