সম্প্রতি ভারতের আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নতুন শর্ত আরোপ করেছে, যা প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মূলত, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহের শর্তাবলীতে কিছু পরিবর্তন প্রস্তাব করেছে, যা বিদ্যুতের চুক্তির শর্তের তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হতে পারে কারণ বিদ্যুৎ প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধির ফলে সরকারের বিদ্যুৎ ব্যয়ের ওপরও চাপ বৃদ্ধি পাবে।
অন্যদিকে সংবাদ মাধ্যমে একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে ৭ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশকে বকেয়ার ৮৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছে আদানি গ্রুপ। এ বিষয়ে আদানি পাওয়ার জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে বকেয়া পরিশোধের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়নি। একটি পিআর ফার্মের মাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে তারা স্পষ্ট করেছে যে, আদানি সাত দিনের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ডলারের পূর্ণ পেমেন্ট দাবি করেনি। বিষয়টির সমাধানে আদানি বাংলাদেশের পিডিবির সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা ইউএনবি এ তথ্য প্রকাশ করে।
এর আগে, টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন দাবি করেছিল যে, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশকে বকেয়া পরিশোধের জন্য ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, যা ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের সমান, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
এই খবরে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, আদানি গ্রুপের পাওনা দ্রুত পরিশোধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোববার রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আদানি পাওয়ার পাওনা রয়েছে এবং পরিশোধের প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া বকেয়ার কারণেই এই পরিমাণ বেড়েছে।
শফিকুল আলম জানান, আদানি গ্রুপকে গত মাসে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা আগস্ট বা আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণ। সর্বোচ্চ গতিতে বাকি পরিশোধ সম্পন্নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ বেড়েছে, ফলে রিজার্ভে চাপ না দিয়েই আন্তর্জাতিক পেমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে। এখনো ৭০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে, যা দ্রুত পরিশোধ করা হবে।
এর আগে আদানি গ্রুপ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা দিয়েছিল এবং বকেয়ার নিশ্চয়তার জন্য ১৭০ মিলিয়ন ডলারের লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) চেয়েছিল। যদিও পিডিবি কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি ইস্যু করেছিল, এটি বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি অনুযায়ী ছিল না। ডলার সংকটকেও একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এবং পরবর্তীতে আদানি গ্রুপ তাদের ঝাড়খণ্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে কমিয়ে দেয়।