বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে কোনো নির্বাচন নেই। এটা আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী বা অনুগত দলের প্রার্থী দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্বাচন। তাই এটাকে নির্বাচন না বলে একদলীয় নির্বাচন বলা যেতে পারে। আরেকটু এগিয়ে এটাকে বাকশাল-২ প্রতিষ্ঠার নির্বাচনও বলা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘একক দল হিসেবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা, গ্রেপ্তার, ফাস্ট ট্র্যাক, সাজা ও হামলা-মামলা করা হয়েছে এবং তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্র। এগুলোর মাধ্যমে সরকার দুটি লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। এক. নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির অংশগ্রহণ ঠেকাতে ড. দুই. কারচুপির নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এ কাজে সরকার দলীয় স্বার্থে পুলিশ, জনপ্রশাসন, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, যখন একতরফা, বিতর্কিত ও কারচুপির নির্বাচন হয়, তখন সংসদে বা অন্যত্র সরকারের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে না; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি দলের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, দেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনাচার, ব্যাংকের পুঁজি লুটপাট, অন্য দেশে অর্থপাচার এবং বিদেশের গুপ্তচরবৃত্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আসিফ নজরুল বলেন, ২০২৪ সালে একতরফা ও সাজানো নির্বাচন হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট আরও তীব্র হবে। এই নির্বাচনে সরকারকে সমর্থনকারী দেশগুলো বাংলাদেশের কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা আদায় করবে। এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। ১ . জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ ভেঙে দেওয়ার এবং পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক সুযোগ গ্রহণ করা। ২ . বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য সংলাপের আয়োজন করা ৩ . নির্বাচনকালীন সরকারের সম্ভাব্য সকল রূপরেখা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা ৪ . নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিলে বিএনপিকে উন্মুক্তভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, নির্বাচন শুধু বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব নয়, এটি কোটি কোটি তরুণ ও নাগরিকের ভোটাধিকারের প্রশ্ন। দেশের অধিকাংশ মানুষ বহু বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এটা বাংলাদেশের সংবিধানের, বিশেষ করে ৭ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভাবতেও খারাপ লাগে যে, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে যে, আরেকটি ভুয়া নির্বাচন দিয়ে ১৫ বছরের একতরফা ও স্বৈরাচারী শাসনে টিকে থাকার কোনো গৌরব নেই। এক পর্যায়ে দলকে এর মাশুল দিতে হবে। কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শক্তি, সামর্থ্য ও সম্ভাবনার ক্ষতি অপূরণীয় থেকে যেতে পারে। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা করি। বিরোধীরা সে বিষয়ে নমনীয় হবে। কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি যে এটা না হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০০ %।
Check Also
আগামীকাল ক্যান্টনম্যান্টে হামলার পরিকল্পনা করেছে আঃলীগ, মিটিংয়ের ভিডিও আসছে: ইলিয়াস হোসেন
ড. বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল শীঘ্রই মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে খুব …