Wednesday , December 25 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ৬ মাস বয়সী অবুঝ ছেলে জানেনা আর কখনো বাবার কোলে উঠতে পারবে কিনা

৬ মাস বয়সী অবুঝ ছেলে জানেনা আর কখনো বাবার কোলে উঠতে পারবে কিনা

সবকিছুই যেন ঘটে গেল চোখের পলকে। চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডের অগ্নিকান্ডে মানুষ হারিয়েছেন তাদের খুব কাছের মানুষদের। আবার কেউ কেউ হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটিকে। স্বজনদের হারিয়ে নির্বাক হয়ে পরেছেন পরিবারের মানুষরা। সীতাকুন্ডে আগ্নিকান্ডে ফায়ারম্যান গাওসুল আজম দগ্ধ হয়ে পাঞ্জা লড়ছেন প্রয়ানের সাথে। তার মা আল্লাহর কাছে তার ছেলের জান ভিক্ষা চাইছেন।

একমাত্র ছেলে ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের (২৩) অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে তার মা আসিয়া বেগম তার বুকে চাপ দিয়ে বিলাপ করে বলেন, আল্লাহ যেন আমার সোনা দিয়ে সুস্থ করে দেন। বিলাপ করতে করতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। প্রতিবেশীরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। ৬ মাস বয়সী ছেলেকে কোলে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন গাউসের স্ত্রী কাকলী খাতুন। শোকে সে যেন পাথর হয়ে গেছে তার কান্না ভুলে।

পোড়া গাউসুল আজমের বাড়ি যশোরের মণিরামপুরের খাতুয়াডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে এসব চিত্র সামনে আসে।

মণিরামপুরের খাতুয়াডাঙ্গা গ্রামের আজগর আলীর একমাত্র ছেলে গাউসুল আজম ২০১৬ সালে ফায়ারম্যান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে তার কর্মস্থল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানা। তবে তিনি চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে ছয় মাস ধরে ডেপুটেশনে কর্মরত ছিলেন।

অগ্নিদগ্ধ গাউসুল আজমকে নিয়ে চিকিৎসকরা যখন ব্যস্ত তখন বাবা আজগর আলীসহ তার পরিবার তার ছেলের খবর জানতেন না। রবিবার ঘড়ির কাঁটা যখন সকাল সাড়ে ৮টা বাজে তখন ঘরে মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে।

বাবা আজগর আলী ফোন পাওয়ার সাথে সাথে চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার সার্ভিস অফিস জানায়, তার ছেলে গাওসুল আজম ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালের বেডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। এ সময় পরিবারের সদস্যরা হতবাক হয়ে যান।

শনিবার রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে গাওসুল ও তার সহকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ছুটে যান। সেখানে তার গাড়িতে আগুন ধরে যায়। তার সহকর্মীরা নিহত হলেও গাওসুল আজম বেঁচে আছেন। রাতে তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে আনা হয়।

প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। সকালে খবর পেয়ে বাবা আজগর আলী, চাচা আকবর আলী, একমাত্র শ্যালক মিজানুর রহমানসহ স্বজনরা ঢাকায় ছুটে আসেন। রোববার সন্ধ্যায় গাউসুল আজম খাতুয়াডাঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়িতে গেলে শুধু মানুষের ভিড় দেখেন। গ্রামের নারী-পুরুষকে বাকরুদ্ধ মনে হলো। গাওসুল আজমের মা আছিয়া বেগম শুধু বুকে হাত বুলিয়ে মূর্ছা যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ যেন আমার বাবাকে সুস্থ করে দেন এবং তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। আমি আমার ছেলের জন্য আপনার কাছে ভিক্ষা চাই। গাউসুল আজমের মাত্র ছয় মাস বয়সী ছেলে সিয়াম প্রতিবেশীদের কোলে। তার স্ত্রী কাকলী খাতুন বাকরুদ্ধ। সে কিছু বলতে পারে না।

প্রসঙ্গত, গাউসুলের শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে পুড়ে যায়। তার বেছে থাকার আশঙ্কা কম তবে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না কি হয়। গাউসুলের মা ছেলের পাশে বসে বার বার মূর্ছা যাচ্ছে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করছেন। এমন দৃশ্য আসলে দেখাটা খুবই কঠিন বিষয়।

About Shafique Hasan

Check Also

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে নয়াদিল্লির জবাব, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পৌষ মাস নাকি সর্বনাশ?

ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্য করেছে। নয়াদিল্লি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *