খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে তুলে নেওয়ার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর ওই মাইক্রোবাসে সোনাডাঙ্গা থানায় হাজির হন ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত তরুণী ও তার মা। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই তরুণী গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তাকে ধর্ষণ বা অপহরণ করা হয়নি। কোনো অভিযোগ না থাকায় পুলিশ আটকদের ছেড়ে দেয়। রাতে তারা বাড়ি ফেরেন।
ঘটনার একদিন আগে অপহৃত তরুণী ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই তরুণী নিজেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন।
এরপর রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে ক্লিয়ার করার সময় ওই তরুণী ও তার মাকে একটি মাইক্রোবাসে করে হাসপাতালের ওসিসির সামনে থেকে ফিল্মি স্টাইলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়রা ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এজাজের চাচাতো ভাই গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
পরে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই মাইক্রোবাসে ওই তরুণী ও তার মা থানায় আসেন। সেখানে ওই তরুণী দাবি করেন, তাকে ধর্ষণ বা অপহরণ করা হয়নি।
ঘটনাস্থলে থাকা বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মমিনুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে জানতে পেরে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা খুমেক হাসপাতালের ওসিসির সামনে অপেক্ষা করছিলেন। ওসিসি। ওই তরুণী তার মাকে নিয়ে বের হলে একদল দুর্বৃত্ত তাদের জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। এ সময় স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে সোনাডাঙ্গা থানায় সোপর্দ করে।
জানা গেছে, তুলে নেওয়ার পর মেয়ে ও তার মাকে কেশবপুর উপজেলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই মাইক্রোবাসে ওই নারী ও তার মা থানায় আসেন। থানায় তাদের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলেন।
জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই তরুণী গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তাকে ধর্ষণ করা হয়নি। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে তার দুইজন লোক ভর্তি করে। সেখান থেকে ছাড়পত্র পেয়ে রোববার দুপুরে তিনি নিজে গাড়িতে করে যশোরের কেশবপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। পরে পুলিশ তাদের খবর দিলে তারা থানায় আসেন।
ওই দুজন তাকে কেন হাসপাতালে নিয়ে গেলেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি ওই তরুণী। তিনি নিজেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দাবি করে বলেন, আরও প্রশ্ন করলে আমি পাগল হয়ে যাব।
সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানান, তাকে ধর্ষণ করা হয়নি। এছাড়া খুমেক হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরও তাকে কেউ অপহরণ করেনি। তিনি নিজে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার তৌহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধেও ওই নারীর কোনো অভিযোগ নেই।
এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই নারীর ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানও লোকচক্ষুর আড়ালে। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।