প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হ’/ত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহন চলছে এবং এই সময় পর্যন্ত ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে এবং নবম দফায় প্রথম দিনের মত আসামিদেরকে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দেয় আদালত এবং সেই সময় প্রধান অভিযুক্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার সাফাই সাক্ষি দেন।
গতকাল (সোমবার) সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটের দিকে শুরু হয়ে বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম চলমান থাকে। আসামী প্রদীপ সহ অন্য আসা’মিদেরকে মোহাম্মদ ইসমাইল যিনি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে রয়েছেন তার আদালতে হাজির করা হয়। তবে অভিযুক্তরা সবাই জানিয়েছেন তারা কেউ সিনহা হ’/ত্যার সঙ্গে জড়িত নন এবং এই ঘটনায় তারা নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন।
আদালতে উপস্থিত চিলেন যে সক আইনজীবী তাদের মাধ্যে কয়েকজন জানান, টেকনাফ মডেল থা’নার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস মেজর সিনহা হ’/ত্যার দায় অস্বীকার করেন। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় প্রদীপ দাবি করেন, সিনহা হ’/ত্যার সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না।
আদালতকে প্রদীপ কুমার দাশ বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যারা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, সবাই ই’/য়া’বা ব্যবসায়ী ও সুবিধাভোগী। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তিনি টেকনাফে নিষিদ্ধ দ্রব্যে নির্মূলে ভূমিকা রেখেছিলেন, সফলও হয়েছিলেন। সিনহা হ’/ত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। বরং পরিকল্পিতভাবেই তাকে (প্রদীপ) সিনহা হ’/ত্যা মামলার আসা’মি করা হয়েছে। এই হ’/ত্যার দায় তিনি নেবেন না।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রদীপের কাছে জানতে চান, সাক্ষীদের মধ্যে কয়েকজন পু’লিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহি’নীর কর্মকর্তা, মসজিদের ইমামরাও ছিলেন, তারাও ঐ নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবসায়ী ছিলেন কিনা? তখন প্রদীপ কিছুক্ষণ চুপ ছিলেন। তারপর বলেন, ঐ নিষিদ্ধ দ্রব্যের সিন্ডিকেট মিলে তাকে সিনহা হ’/ত্যা মামলার আসা’মি বানিয়েছে। তিনি এই হ’/ত্যার দায় নিতে রাজি না।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯ টায় ওসি প্রদীপসহ এই মামলার ১৫ জন আ’সামিকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আদালতে নিয়ে আসা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, সিনহা হ’/ত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসা’মি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৪ জন আসামির সাফাই সাক্ষ্য আজ শেষ হয়েছে। সবাই হ’/ত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না দাবি করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের (আসা’মিদের) সিনহা হ’/ত্যা মামলার জড়িত করা হয়েছে। এর দায় থেকে তারা অব্যাহতি চেয়েছেন। এর আগে অষ্টম দফায় ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার আসা’মি নন্দদুলাল রক্ষিতের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হবে। নবম দফায় আদালতের কার্যক্রম চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আইনজীবীরা বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাফাই সাক্ষ্য দিতে আসেন সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলী। ৬৫ জন সাক্ষীর জবানব’ন্দিতে উল্লেখ ছিল, ওসি প্রদীপের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গু’/লিতে খু’/ন হন সিনহা মো. রাশেদ খান।
কিন্তু সাফাই সাক্ষ্য দিতে গিয়ে পরিদর্শক লিয়াকত আলী আদালতকে বলেন, সিনহাকে তিনি (লিয়াকত) গু’লি করেননি। হ’/ত্যাকা’ণ্ডের অপরা’ধেও তিনি যুক্ত নন। হ’/ত্যার দায় স্বীকার করে ইতোমধ্যে আদালতে তিনি যে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, আদালতে তা–ও অস্বীকার করে লিয়াকত আলী বলেন, এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তার না, তিনি আদালতে জবানবন্দি দেননি।
গেল বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতের দিকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শ্যামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গু’/লিতে মেজর সিনহা প্রয়াত হন। পুলিশ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনটি মামলা করে (টেকনাফে দুটি ও রামুতে একটি)। ঘটনার পর ঐ বছরের ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে প্রদীপ কুমার দাস ও লিয়াকত আলীসহ নয় জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হ’/ত্যা মামলা দায়ের করেন মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
মামলায় গেল বছরের ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ ও তদন্ত কর্মকর্তা বাদী হয়ে কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সেই সময়ে দায়িত্বে থাকা সহকারী পু’লিশ সুপার খায়রুল ইসলাম এবং প্রধান আ’সামী প্রদীপসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে অভিযোগ গঠন করেন। এই মামলায় ৮৩ জন বিভিন্ন প্রধান ঘটনাসহ অন্যান্য বিষয়ে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্য হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৬৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছে।