গত ৫ আর্থিক বছরে (২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪) সরকারি যানবাহন কেনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। একইসঙ্গে জ্বালানি তেল খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, গত ৪ অর্থ বছরে ১২২৬টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রকল্পের যানবাহন কাজ শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে সরকারি পরিবহন পুলে জমা দিতে হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, একই সময়ে (গত অর্থবছর) প্রকল্পের অধীনে মাত্র 138টি যানবাহন জমা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন অন্তত ২০ হাজার যানবাহন অবৈধভাবে চলছে।
কোনো রকম যত্ন ছাড়াই নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছেন। আর ব্যবহৃত গাড়ি জমা না দেওয়ায় সৃষ্ট সংকটের কারণে নতুন গাড়ি কিনতে হচ্ছে। এছাড়া অবৈধভাবে এসব যানবাহনের পেছনে জ্বালানি ও চালকের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ে কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। যুগান্তরের নিজস্ব গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের যানবাহন সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। আদেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সম্পন্ন প্রকল্পে ব্যবহৃত যানবাহন এবং কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তা জানতে চাই।”
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন শাখা সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ির তথ্য চেয়েছে। ওই চিঠিতে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত যানবাহন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা দেওয়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই, তবে, লালন করা প্রয়োজন. এটি পরিলক্ষিত হলে নতুন গাড়ি ক্রয় খাতে ব্যয় কমতে পারে। খরচ কমানো এখন আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার। অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমাতে হবে। কিন্তু কিছু কর্মকর্তা এসব যান ফেরত দেন না, লুকিয়ে রাখার প্রবণতা রয়েছে।
চলতি অর্থ বছরে ডিসি এবং ইউএনওদের জন্য ২৬১ টি জিপ গাড়ি কেনার ঘটনাটি ঘটেছে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনসহ মাঠপর্যায়ের কাজে এই গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি গাড়ির দাম ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসাবে একটি গাড়ি কিনতে মোট খরচ হবে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। এই সভার কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত সারসংক্ষেপ আকারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব অনুমোদন না করে কিছু নির্দেশ দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘২৬১টি গাড়ি কিনতে কত টাকা লাগে? জেলা ও উপজেলা অফিসে কোন গাড়ি নেই? সেখানে কতগুলো গাড়ি আছে? আমি জানতে চাই যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলির জন্য ব্যবহৃত গাড়ি আছে কিনা এবং সেগুলি কিসের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। গাড়ি কেনার অফারে দাম উল্লেখ নেই কেন?’
যুগান্তর শেষ প্রজেক্টের গাড়ির খোঁজখবর নেন। দেখা গেছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৯৩টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। আইন অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের মাঝামাঝি ৬ মাসের মধ্যে এসব প্রকল্পের কয়েক হাজার গাড়ি সরকারি পরিবহন পুলে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি পরিবহণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪১টি যানবাহন জমা হয়েছে, যার মধ্যে ২৪টি গাড়ি, ১০টি জিপ, ৪টি মাইক্রোবাস এবং ৩টি পিকআপ। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৫০ টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী আর্থিক বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ -এ, ৫ টি গাড়ি, ১৫ টি জিপ, ৬ টি মাইক্রোবাস, 5টি পিকআপ এবং ২ টি মোটরসাইকেল সহ মাত্র ৩৩ টি যানবাহন জমা হয়েছে।আইএমইডি রিপোর্টে দেখা গেছে যে ২০২১ -২২ অর্থবছরে ৩৪৬ টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩ ) এসব প্রকল্পে ব্যবহৃত যানবাহনের মধ্যে ৩৫ টি গাড়ি, ১০ টি জিপ, 3টি মাইক্রোবাস এবং 2টি মোটরসাইকেল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত অর্থ বছরে (২০২২ -২৩ ), ৩৩৭ টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। এসব প্রকল্পের কোনোটিই এখনো জমা হয়নি। এর আগে, ২০১৯ -টো আর্থিক বছরে ২৯ টি গাড়ি জমা দেওয়া হয়েছিল।
প্রকল্পের যানবাহন জমা না দেওয়ার বিষয়ে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার মো. আবুল হাসানাত হুমায়ুন কবির বলেন, প্রকল্পের ৬০ দিনের মধ্যে গাড়ি জমা না দেওয়া সম্পূর্ণ সরকারি নির্দেশনার পরিপন্থী। এ বিষয়ে দপ্তরগুলোকে একাধিকবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সম্প্রতি ডিসি ও ইউএনওদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রয়োজন হতো না যদি পুরনো গাড়িগুলো