চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন একটি ইউনিয়নের নারী ভোটাররা স্থানীয় একজন পীরের দ্বারা আরোপিত ফতোয়া দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের ভোটাধিকার থেকে দূরে ছিলেন। রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের এই নারী ভোটারদের মধ্যে মুসলিম এবং হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯৭২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে তারা ভোট দিতে যাননি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের ভোটকেন্দ্রে পাঠানো এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য সরকারী ও বেসরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থার পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করা হলেও তারা সেই ফতোয়া থেকে বের হয়ে ভোট দিতে যাননি। তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ধোঁয়াশায় ভেসে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে নারী ভোটারদের উৎসাহ প্রদানমূলক কার্যক্রম এবং জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শের পর, নারীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে আগ্রহ দেখায়। গত কয়েক বছরে ঐ ইউনিয়নে মহিলা ভোটারদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবার ৫০ বছর পর ভোট দিলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬ নম্বর দক্ষিণ রূপসা ইউনিয়নের নারীরা। বুধবার সকালে পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে পৃথক ওয়ার্ডে নারীরা ভোট দিয়েছেন।
জানা গেছে, সকালে বিপুল আনন্দ উৎসাহ নিয়ে ১৬নম্বর দক্ষিণ রূপসা ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া শহীদ হাবিবুল্লা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রথম নারী ভোটার হিসেবে ভোট দিয়েছেন ডা. আনোয়ারা হক। তিনি ফরিদগঞ্জের সাবেক এমপি ড. সামছুল হক ভূঁইয়ার পত্নী।
এদিকে নারীরা ভোট দিয়েছেন লোকমুখে এমন খবর ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়লে এরপর পরই ৬নম্বর ওয়ার্ডে গৃদকালন্দিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আরেক নারী ভোটার মনোয়ারা বেগম মুন্নি ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নিজের ভোট দেন।
ভোট প্রয়োগ শেষে নারী ভোটার মনোয়ারা বেগম মুন্নি বলেন, এ দেশটা আমাদের সবার। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়া আমাদের অধিকার। কুসংস্কার সব সময়ই নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে আসছেন। আমি মনে করছি এ ইউনিয়নের নারীরাও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে সমাজ বিনির্মাণে অংশ নিতে নিজের হক আমানতের ভোটটি প্রয়োগ করবেন।
স্থানীয় মিজানুর রহমান, টিটু হাওলাদার, শফিক কারী, মামুন দেওয়ানসহ একাধিক লোক জানিয়েছেন, কোনো একসময় জৈনপুরী পীরের নির্দেশনায় এ ইউনিয়নের নারীরা ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। তা এখনও নারীরা ভোট দিলে মহামারি ছড়িয়ে পড়বে আশ’/ঙ্কায় নিজেদের ভোট দিচ্ছেন না। যা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ নারীদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাই ডা. আনোয়ারা হক এবং মনোয়ারা বেগমের স্ব-উদ্যোগে এই ভোট প্রদান অন্য নারীদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানে উৎসাহ জোগাবে বলে আমরা মনে করছি।
প্রসংগত, একটি কুসংস্কারের কারণে নারীরা ভোট দিতে যেতেন না। নারী ভোটারদের তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করার জন্য ঐ ইউনিয়নে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বেশ কিছু এনজিও সংগঠন। মজার বিষয় হল, এই ইউনিয়নের মহিলারা বর্তমানে সরকারী, বেসরকারী এবং কর্পোরেট অফিসসহ বিভিন্ন সেক্টরে পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছেন এবং সংরক্ষিত আসন থেকে মহিলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরাও পুরুষ ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তারা ভোট দিতে যেতেন না এবং তারা ফতোয়াকে অস্বীকার করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আগ্রহী হননি কখনও।