গাইবান্ধা সদর থানার স্টেশন রোড এলাকায় ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (৩০)। পেশায় ছাপাখানার কর্মী হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন সমস্যার সমাধান করে ‘মাস্টার’ খেতাব পান।
নিজের এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আনোয়ার এক অভিনব প্রতারণার সূচনা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রীসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নামে ফেসবুক আইডি ও হোয়াটসঅ্যাপ খুলে শত শত নারীকে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি।
সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিনের নামে ফেসবুক আইডি ও হোয়াটসঅ্যাপে ৭৭১ জন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ও আপত্তিকর ছবি শেয়ার করার বিষয়ে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় বিব্রত হয়ে প্রথমে তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন এবং পরে ওসি মহসিন নিজেই বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
গাইবান্ধা জেলার সদর থানার স্টেশন রোডে ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আসামি আনোয়ারকে তেজগাঁও থানার একটি বিশেষ দল গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি কম্পিউটার, আইপি ক্যামেরা, রাউটার ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) লিটন কুমার সাহা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আনোয়ার মাত্র ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও ধীরে ধীরে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন কারিগরি বিষয় শিখে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। স্থানীয় অনেকের ফেসবুক আইডি সমস্যার সমাধান করায় তাকে মাস্টারও বলা হতো। আর এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রিয় ব্যক্তিরা একই নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলতেন। এরপর তিনি নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং টাকা চুরি করে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার আরও জানান, আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের পর রাষ্ট্রপতির কম্পিউটার ও মোবাইল ছিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, চাঁদপুরের সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান, তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন, অভিনেতা শান্ত খান, অভিনেতা মো. আর মডেল আব্দুন নূর সজল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফেসবুক আইডি পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু আইডি নিষ্ক্রিয় করা হলেও বাকিগুলো সক্রিয় ছিল।
তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণিতে ফেল করলেও আনোয়ার মেয়েদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালো। কখনো ওসি, কখনো নায়ক, কখনো জনপ্রতিনিধি হয়ে আড্ডা দিতেন। ভুয়া আইডি খুলে তিনি এ পর্যন্ত সাত শতাধিক নারীর সঙ্গে কথা বলছেন। ছাত্রী, গৃহিণী, প্রবাসী, মডেল সবাই আছেন এই তালিকায়। মেসেঞ্জারে কথা বলার পর তাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপেও কথা বলুন।
কথা বললেও কারও সঙ্গে ভিডিও কলে আসতেন না। কেউ তাকে দেখতে চাইলে বা সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করে দিতেন। মেয়েদের সাথে আপত্তিকর কথা বলতেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে ছবিও বিনিময় করেন। কারো কাছে টাকাও দাবি করেন।
লিটন কুমার আরও জানান, আনোয়ার চাকরির ফাঁকে ইউটিউব দেখে ফেসবুকের বিভিন্ন কৌশল শিখেছেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন মানুষের ফেসবুকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন। তাছাড়া গাইবান্ধা জেলার সদর থানার খোলাবাড়ি গ্রাম ও দশবেকরি মোড় এলাকায় তিনি ‘ফেসবুক মাস্টার’ নামে পরিচিত। তিনি তার এলাকার যেকোনো ব্যক্তির আইডি, পাসওয়ার্ড রিকভারি, পেজ ভেরিফিকেশন, রিপোর্ট বা স্ট্রাইক পেজ রিকভারিসহ ফেসবুকের যেকোনো সমস্যা সহজেই সমাধান করতেন।