Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ৪ ছাত্রকে কোয়ার্টারে ৮ ঘন্টা তালাবদ্ধ করে রেখে বিপাকে মহিলা ইনচার্জ, জানা গেল কারণ

৪ ছাত্রকে কোয়ার্টারে ৮ ঘন্টা তালাবদ্ধ করে রেখে বিপাকে মহিলা ইনচার্জ, জানা গেল কারণ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রাখার টনা একটি অমানবিক কাজ, যেটা ইদানিংকালের নজিরবিহীন ঘটনা। এবার তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে। ওই প্রতিষ্ঠানের ৪ জন শিক্ষার্থীকে আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে স্টাফ কোয়ার্টারে তালা বন্ধ করে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার অর্থাৎ ২০ জুলাই ওই প্রতিষ্ঠানে সকাল ১০টা হতে তাদেরকে মেইন গেটে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এমনটাই জানা গেছে।

পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ আলোমতি বেগমের নির্দেশক্রমে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের দুই কর্মচারী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইনচার্জ আলোমতী বেগম।

এদিকে নার্সিং ইনস্টিটিউটের কোয়ার্টারে স্টাফ ছাড়া শিক্ষার্থীদের রাখার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। নার্সিং খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও খুলনা নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ আছমতুন নেছা বলেন, সাড়ে ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘন।

জানা যায়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রথম ঢেউয়ের সময় চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ আলোমতি বেগমের অনুমতি নিয়ে নার্সিং ইনস্টিটিউটের সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে ওঠেন নোয়াখালীর তৌফিকুল ইসলাম (২০), নরসিংদীর আজিজুর রহমান সিয়াম (২০), পটুয়াখালীর সাকিব (২০) ও টাঙ্গাইলের শওকত (২০)। তিন মাসের জন্য তাদের কোয়ার্টার খালি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও বাড়ি ভাড়া না দেওয়ায় তারা তাদের কোয়ার্টার খালি করেনি। বুধবার সকাল ১০টার দিকে তাদের অবরুদ্ধ করা হয়।

খবর পেয়ে সদরের ইউএনও শামীম ভূঁইয়া, ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম, পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ দারোয়ানের রাখা চাবির সাহায্যে তালা খুলে তাদের উদ্ধার করেন।

বিক্ষু/”ব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের কোয়ার্টার ছেড়ে চলে যেতে বলেন। আমরা ব্যাচেলর বলে কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না। রাতেও ক্লাস করতে হবে। সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে, কোনো বাড়িওয়ালা আমাদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিতে চাইছে না।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ ইনচার্জের নির্দেশে অফিসের হিসাবরক্ষক রফিকসহ দুইজন কোয়ার্টারের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। আমরা সারাদিন না খেয়ে আটকে ছিলাম। কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। কেউ খাবার দেয়নি। সাংবাদিক শাহ আলম সনির সঙ্গে যোগাযোগ করলে ইউএনও সাংবাদিক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আমাদের উদ্ধার করেন।

ইউএনও শামীম ভূঁইয়া ক্ষো”ভ প্রকাশ করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করেছি। আমরা না এলে হয়তো সারা রাত এভাবেই কাটাতে হতো। এটা অমানবিক।

কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। আমি মৌখিক নির্দেশ দিয়েছি যে তাদের থাকার ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তারা এই কোয়ার্টারে থাকবে।

চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ আলোমতি বেগম বলেন, শিক্ষার্থীদের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকা বৈধ নয়। তারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবে। করোনার সময় মানবিক কারণে তাদের এখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে মৌখিকভাবে ৩ মাসের জন্য তাদের কোয়ার্টার খালি করতে বলা হলেও তারা তা করেনি।

তিনি আরও বলেন, গতকাল ছুটিতে ছিলাম। কে তালা দিয়েছে জানি না। যদি তা হয়, তাহলে ঘোর অন্যায় করা হয়েছে। আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেব। সত্যতা পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। নার্সিং ইনস্টিটিউটের চতুর্থ শ্রেণির কিছু কর্মচারী এই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের পেছনে রয়েছে। গতকাল সকালে তাদের তালাবদ্ধ করা হয়। নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জকে ফোন করা হলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

রবিউল নামে এক কর্মচারী মুঠোফোনে বলেন, ইনচার্জের নির্দেশে তালা দিয়েছি। সে না থাকলে আমাকে আটকে রাখার সাহস কি করে হয়?

তিনি আরও বলেন, আমাদের জেলায় যারা শিক্ষা নিয়ে মানুষের সেবা করতে এসেছেন তাদের তালাবদ্ধ করে রাখা ঠিক নয়। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

খুলনা নার্সিং বিভাগের সহকারী পরিচালক ও খুলনা নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ আছমাতুন নেছা বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। প্রথমত, নার্সিং ইনস্টিটিউটের কোনো শিক্ষার্থী স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতে পারবে না বলে নির্দেশনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, তাদের আটকে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এই ধরনের খবর ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী সমালোচনা করেন। তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর বিষয়টি অমানবিক। এ বিষয়ে যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা উচিত বলেও দাবি জানিয়েছেন তারা।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *