Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ৪ কারণে কমেছে গরুর মাংসের দাম

৪ কারণে কমেছে গরুর মাংসের দাম

গরুর মাংস দল বেঁধে বিক্রি হচ্ছে এবং সেই মাংস কিনতে ক্রেতারা দোকানে লাইন দিচ্ছেন। কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৬০০ টাকায় কিনছেন ক্রেতারা। গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর সিপাহীবাগ, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, রামপুরায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। তবে কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুলে মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা দরে। বাজারে হঠাৎ করে গরুর মাংসের দাম কেন কমে গেল তা ভাবছেন অনেকেই। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মোটাদাগে কৃষক থেকে মাংস বিক্রেতা পর্যন্ত চারটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানান, দাম বেশি হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় বিক্রিও কমেছে। তাই দাম কমিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছেন মাংস বিক্রেতারা। আরেকটি কারণ কৃষকদের উদ্যোগ। মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই এখন গরুর বিনিময়ে মাংস বিক্রি করছেন। হাটে গরুর দামও কমেছে। এ ছাড়া দাম কমানোর পেছনে ভারতীয় গরু-মাংসও পাচারের কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বিক্রেতারা মাংসে হাড় ও চর্বির পরিমাণ বাড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা। দাম কম রাখার এটাও একটা কারণ।

পাচার হচ্ছে ভারতীয় গরু ও মাংস
মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় মাংস বিক্রি শুরু হয়েছে। সেখানে কসাইদের কাছে গরু বিক্রি না করে নিজেই কম দামে মাংস বিক্রি শুরু করেন এক কৃষক। তার পরিদর্শনের পর পুরান ঢাকার বাঁশাল, মালিবাগ ও রায়েরবাজারে মাংস বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়। তবে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধভাবে ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশের কারণে মাংসের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে দাম নির্ধারণ না হলে আবারও মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে
প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে দেশের মানুষের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে গরুর মাংস। বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে দাম নিয়ে নয়ছয় করত। ২০১৮ সালে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও সিটি করপোরেশন মিলে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে ৩২০ টাকা। ২০২৩ সালে এসে সে দাম দাঁড়ায় ৮০০ টাকা। এভাবে বছর বছর দাম বাড়তে থাকায় অনেক মানুষের খাদ্যতালিকা থেকে গরুর মাংস উঠে যায়, বদল আসে খাদ্যাভ্যাসে। এতে চাহিদাও কমে যায়।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, গরুর মাংস সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় অনেকেই তাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, “মাংসের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। যার কারণে মানুষ গরুর মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে মানুষ বিকল্প খাবারের দিকে ঝুঁকছে। এটা স্বস্তির বিষয় যে দাম বেড়েছে। এখনই নেমে আসুন আমরা আশা করি কম দামে মাংসের দাম স্থিতিশীল থাকবে।

হাটে গরুর দাম কমেছে
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের আয়মন এগ্রো ভেটের মালিক আলী আজম রহমান শিবলী জানান, আগে গরুর মাংস বাজারে বিক্রি হতো ২৫ হাজার টাকায়। এখন বিক্রি হয় ২১ হাজার টাকায়। কারণ অনেক কোরবানির গরু অবিক্রিত থেকে যায়। এ সময় পিকনিক, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে সেগুলো হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ হলেও চাহিদা কম। বাজারে গরুর গোশতের দামও কিছুটা কমেছে। এসব কারণে গরুর দাম কমেছে।

দাম নির্ধারণের দাবি
আবারও মাংসের বাজার স্থিতিশীল করতে দাম নির্ধারণের দাবি উঠেছে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, “ভোক্তা অধিকার মাংসের বাজারে কার্যক্রম পরিচালনা না করায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে। বিভিন্ন এলাকায় এখনো বিভিন্ন দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। যদিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা নির্ধারণের জন্য বারবার বলা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।এখনই মাংসের দাম নির্ধারণ না হলে আবারও দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে খামারি ও মাংস ব্যবসায়ীদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে মাংসের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংস উৎপাদন হয়েছে ৮ দশমিক ৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপাদন হয়েছে।

About Zahid Hasan

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *