বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মী, পেশাজীবী ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অনুপস্থিত ও হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কার্যালয় অভিমুখে আইনজীবীদের মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। মাজারের গেটে তাদের থামানো হয়। পরে তারা মাজারের গেটের সামনে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ পাঁচজনকে আইজিপি কার্যালয়ে যেতে দেয়। গতকাল দুপুর ১টার দিকে সরকারবিরোধী আইনজীবী সংগঠন ইউনাইটেড লয়ার্স ফ্রন্ট এ কর্মসূচি পালন করে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে জড়ো হন আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবী নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। দুপুর ১টার দিকে গায়েবি মামলা এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও বিরোধী মত দমনের জন্য পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কার্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন আইনজীবীরা। এ সময় মাজারের গেটে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। আমাদের আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
বাধার কারণে আমরা পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আইজিপি অফিসে যাই। পরে আইজিপির কাছে স্মারকলিপি পেশ করি। ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সহ-আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক মহসিন রশিদ, সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ পাঁচ আইনজীবী আইজিপির কাছে স্মারকলিপি দাখিল করতে যান।
আইজিপির কাছে ৪টি অভিযোগ
আইজিপিকে উদ্দেশ্য করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, আপনি এমন একটি সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যার পূর্বসূরিরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত অপারেশন সার্চ লাইট গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রথম প্রহরে বহু পুলিশ সদস্যকে শহীদ করেছিলেন। ” তাই বাংলাদেশ পুলিশ এ দেশ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। পুলিশ মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র, পুলিশ রাষ্ট্র নয়। ক্তে অর্জিত সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত অনুচ্ছেদ ৩৬, ৩৭, ৩৮ এবং ৩৯ অনুযায়ী নাগরিকদের চলাফেরা, সমাবেশ, সংগঠন এবং চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা আছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, গত কয়েক মাস ধরে আমরা প্রত্যক্ষ করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন, সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সদস্যদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বিশ্বের একটি বিখ্যাত পত্রিকা এই গায়েবি মামলা, বিরোধী দলকে দমন করতে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের অপেশাদারী কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ আইন সম্প্রতি বার্ষিক প্রতিবেদনে এই ধরনের গায়েবি মামলার ভারে বাংলাদেশের আদালতসমূহ এক ভয়াবহতায় পতিত হয়েছে, তার উল্লেখ করেছে।
পুলিশের তৎপরতার কারণে সাংবিধানিক পিএই বেঙ্গল ইস্ট, আইনের শাসন, সর্বোপরি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার চরম সংকটের মুখে- ১। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভৌতিক ও গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। এমনকি মৃত ব্যক্তিরাও এ ধরনের গায়েবি মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ২। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন সুনিশ্চিত হলেও, জেলগেট থেকে মুক্তির সময় শ্যোন অ্যারেস্ট নামক ডিভাইস দ্বারা নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ৩। সংবিধান অনুমোদিত সভা-সমাবেশ করার আয়োজনের ক্ষেত্রে পুলিশের অহেতুক বাধা এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের সময় ন্যূনতম সৌজন্য প্রদর্শন করা, পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি কোনো সম্মান না দেখানো, এমনকি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতি পুলিশ যে সৌজন্য প্রদর্শন করেছিল, তা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল। অতি সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে তার স্ত্রী-সন্তানের সামনে নৃ/শংসভাবে আটক করে মধ্যরাতে দরজা ভেঙে পুলিশি হেফাজতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। ৫. ‘বাংলাদেশ বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পুলিশকে রিমান্ডে নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানছে না। , যা আইনের শাসনের অন্যতম বাধা এবং নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘন।
আমরা আপনাকে স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে বাংলাদেশ পুলিশ, যা জনগণের ট্যাক্সের অর্থ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সরকারী দলের ইচ্ছা বা অভিপ্রায় অনুযায়ী নয়, দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালনের প্রত্যাশা করে।দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান এবং পুলিশ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বিধি বিধান এবং দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা রাখি। দলীয় পুলিশ নয়, জনগণের পুলিশ এটাই বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা। পরিশেষে, অবিলম্বে গায়েবি মামলা দায়ের, শ্যোন গ্রেফতার আদেশ, সভা-সমাবেশে অহেতুক বাধা-বিপত্তি এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করার জন্য যুক্ত আইনজীবী ফ্রন্ট আপনাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছে।