“টানা ছয় দিন চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিলাম, কোথায় আছি জানতাম না। কারো সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ ছিল না। যা দেওয়া হতো তাই খেতে হতো। এভাবেই ৪৬ দিন বন্দি ছিলাম। কিন্তু ড. ইউনূস স্যারের জন্য আমরা মুক্ত হয়ে দেশে ফিরতে পেরেছি। যদি তিনি ক্ষমতায় না থাকতেন, হয়তো কারাগারের অন্ধকারেই আমাদের জীবন শেষ হয়ে যেত।”
এভাবেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া নোয়াখালীর নাসের আব্দুল হক তাঁর দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তাঁকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক করা হয়েছিল।
নাসের বলেন, “কারাগারে মনে হতো জীবন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। পরিবার জানত না আমি কোথায় আছি। দেশে ফিরে আসতে পেরেছি, কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্য সব সেদেশে রয়ে গেছে। আমরা ড. ইউনূস স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চাই, কারণ তাঁর প্রচেষ্টায় মুক্তি পেয়েছি।”
তবে শুধু নাসেরই নন, তাঁর মতো আরও অনেক প্রবাসী একই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার। কোম্পানীগঞ্জের সাইফুদ্দিন জনি, সুবর্ণচরের মো. জাহাঙ্গীর, এবং সেনবাগের আব্দুর রহমানও একই পরিস্থিতিতে ছিলেন। সাইফুদ্দিন জনি বলেন, “ফেসবুকে বাংলাদেশের ছাত্রদের ওপর নির্যাতন দেখে বসে থাকতে পারিনি। আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় দুবাইয়ের পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে।”
সুবর্ণচরের মো. জাহাঙ্গীর জানান, “আমরা ৫৭ জনের প্রথম গ্রুপে ছিলাম, কারাগারে দিনগুলো বিভীষিকাময় ছিল। আমাদের ব্যবসা সেদেশে ভালোই চলছিল, যেকোনো শর্তে ফিরে যেতে চাই।”
নোয়াখালী ওয়েলফেয়ার সেন্টারের পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, “বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ১৮ জুলাই দুবাইতে প্রবাসীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। এর পরদিন ৫৭ জন বাংলাদেশিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।”
পরবর্তীতে, ৫ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান তাদের ক্ষমা করেন, যার ফলে এই প্রবাসীরা মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসতে পারেন।