বিপদাপন্ন মানুষ সাহায্য পেতে সাধারণত আইনের দ্বারস্ত হয়ে থাকে। তারা আর কিছুতে বিশ্বাস করুক আর না করুক আইনের প্রতি তাদের রয়েছে অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা। তবে সেই আইনই যদি জনগনের বিশ্বাস ভেঙ্গে দেয় তাহলে এর থেকে দুঃখের আর কি হতে পারে। সম্প্রতি জানা গেছে নূর চেহের নামক এক ব্যক্তি ক্ষতিপূরণের আশায় ৪০ বছর ৪০ বছর প্রশাসনের দুয়ারে ঘুরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে ৪০ বছর ধরে জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। বাড়ি হারানো নূর চেহের বেগমের বয়স এখন ৮৭ বছর। ক্ষতিপূরণ না পেয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে বুধবার (৩ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীরউত্তম মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে অংশ নেন নূর। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গণশুনানিতে রেলওয়ে, পাসপোর্ট, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, সিডিএসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের পাহাড় জমা হয়। আর সেই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে চরম বিব্রত দুদকের কর্মকর্তারা। সব অভিযোগ শুনে দুদক কমিশনার তাৎক্ষণিক সমাধান করেন। আর যেসব সমাধান সম্ভব ছিল না তার জন্য তিনি সময় বেঁধে দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে নূর চেহের বেগম জমি অধিগ্রহণ করেও টাকা না পাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। 1983 সালে, বন্দর কর্তৃপক্ষ নূর চেহের বেগমের জায়গাটি অধিগ্রহণ করে। সেই টাকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই টাকা পাইনি। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ওই টাকা অন্য কেউ নিয়েছে। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বাদী হয়ে মামলা করে। সেই মামলা এখনও আদালতে চলছে। তাই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে যার কারণে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এ সময় নূর চেহের বেগমের ছেলে জানান, নূর তার মায়ের ৪০ বছর জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা-ছেলে দুজনই। এভাবে একের পর এক সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে আসতে থাকে নানা অভিযোগ। দুদকের কমিশনারকে অভিযুক্ত করে একের পর এক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছেন। কর্তৃপক্ষ কিছু অভিযোগের জবাব দিতে পেরেছে এবং কিছু দেয়নি। যারা ব্যাখ্যা করতে পারেননি তারা পূর্ণ মজলিসে খুবই বিব্রত। কেউ অভিযোগ করেন, ঘুষ না দিলে কোনো সমাধান হয় না। দীর্ঘদিন অফিসে গিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছি না।
সমাপনী বক্তব্যে দুদক কমিশনার বলেন, দেশে দুর্নীতি কমবে বলে বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। এরই মধ্যে বড় কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক। এসব কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
দুই বছর পর অনুষ্ঠিত এই গণশুনানিতে ৪৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। আগামী ডিসেম্বরে আবারও শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন দুদক কমিশনার।
প্রসঙ্গত, সঠিক বিচার পাওয়া মানুষের ন্যায্য অধিকার। মানুষ যদি সঠিক বিচার বা ক্ষতিপূরণ না পায় তাদের বিপদের সময় তাহলে তাদের কষ্ট ও আপসোসের কোনো সীমা থাকেনা।