৪০ ঘন্টার অভিযান চালিয়ে যেভাবে ছিনতাই হওয়া জাহাজ উদ্ধার করল ভারত (ভিডিও-সহ)

ভারতীয় নৌবাহিনী ৪০ ঘন্টার অভিযানের পর সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা হাইজ্যাক করা কার্গো জাহাজ এমভি রুয়েন থেকে ১৭ জন নাবিককে উদ্ধার করেছে। এ সময় ৩৫ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি ছিনতাইকৃত পণ্যবাহী জাহাজ উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের গল্প প্রকাশ করেছে।

ভারতীয় নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ৪০ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা এমভি রুয়েনের মাধ্যমে জলদস্যুদের ছিনতাইচেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয়। এটি ভারতীয় উপকূল থেকে ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে নোঙর করা ছিল। এই অভিযানে আইএনএস সুভদ্র নামের আরেকটি ভারতীয় জাহাজও অংশ নেয়।

উদ্ধারকৃত জাহাজটিতে ৩৭ হাজার টন কার্গো ছিল, যার বাজারমূল্য ১০ লাখ ডলার। রোববারই ওই জাহাজ ভারতে আনার কথা।

অভিযানে বেশ কয়েকটি জাহাজ, ড্রোন, বিমান এবং মেরিন কমান্ডো অংশ নেয়। ভারতীয় নৌবাহিনী নজরদারির সময় এমভি রুয়েন নামের জাহাজটিকে শনাক্ত করে। এরপর এই জাহাজটিকে উদ্ধারের জন্য যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা পাঠানো হয়। ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এটি শুক্রবার এমভি রুয়েনের কাছে যায়।

গত ডিসেম্বরে সোমালি জলদস্যুরা জাহাজটি হাইজ্যাক করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে সোমালিয়ার উপকূলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী যে কার্গো জাহাজ ছিনতাই করা হয়েছে, তার জন্য এ জাহাজটিকে জলদস্যুরা ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে থাকতে পারে।

এমভি রুয়েনের কাছে যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা যাওয়ার পর বিশেষ ড্রোন সেখানে পাঠানো হয়, নাম হাই অ্যালটিটিউড লং এনডুরেন্স। তাতে তারা নিশ্চিত হয়, এমভি রুয়েনে জলদস্যু রয়েছে। একটি ড্রোন দেখার পর গুলি চালানো শুরু করে তারা। এতে ভূপাতিত হয় ড্রোনটি।

ভারতীয় নৌবাহিনীর দ্বারা প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে একটি জলদস্যু এমভি রুয়েনের ডেকে হাঁটছে। এরপর জাহাজ দেখে সেইদিকে বন্দুক তাক করছেন। সঙ্গে সঙ্গে গুলিও চালান তিনি।

আইএনএস কলকাতা তখন এমভি রুয়েনের স্টিয়ারিং সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া জাহাজের নেভিগেশন ব্যবস্থাও অকার্যকর হয়ে পড়ে।

ভারতীয় নৌবাহিনী শনিবার এমভি রুয়েনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আকাশযান হিসেবে ব্যবহার করা হয় পি৮আই ও সি–১৭। এই অভিযানে কেউ হতাহত হয়নি।


এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধারে ইইউ-ভারতীয় নৌবাহিনীকে অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালি জলদস্যুরা ছিনতাই করে। ইউরোপীয় মেরিটাইম ফোর্সের একটি জাহাজ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ অবিলম্বে নাবিকদের উদ্ধারের অনুমতি চেয়েছিল।

তবে জাহাজের মালিক এসআর শিপিং এবং বিদেশ মন্ত্রক ইইউ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। নাবিকদের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে সশস্ত্র অভিযানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোঃ খুরশেদ আলম বলেন, ‘সামরিক অভিযান চালানো হলে জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের  প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। যেহেতু জাহাজ মালিক মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়েছেন, তাই এ ধরনের পদক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।’

এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুল করিম এমভি আবদুল্লাহর ওপর সামরিক অভিযানের অনুমোদন দিতে অস্বীকার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের নাবিকদের নিরাপত্তা আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। আমরা আমাদের নাবিকদের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারি না, তাই আমরা উদ্ধার অভিযানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।’

জলদস্যুরা এখনো কোনো মুক্তিপণ দাবি না করলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চলমান প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন করিম।

তিনি আরও বলেন, রোববার জাহাজের ক্যাপ্টেন স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

মেহরুল বলেন,  ‘তিনি আমাদের জানিয়েছেন যে নাবিকেরা সবাই ভালো আছেন এবং জলদস্যুরা জিম্মিদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছে।’

উল্লেখ্য, মোজাম্বিক থেকে ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সোমালি জলদস্যুদের হাতে আটক হয়। গত রোববার জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশি জাহাজে জলদস্যুদের হামলা হলো। এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির এমভি জাহান মনি জাহাজও সোমালি জলসদ্যুরা ছিনতাই করেছিল। ওইসময় জাহাজে ২৫ ক্রু এবং ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ ব্যক্তি ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।