Tuesday , September 17 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ৪০০ কোটি টাকার মালিক প্রধানমন্ত্রীর সেই পিয়নকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

৪০০ কোটি টাকার মালিক প্রধানমন্ত্রীর সেই পিয়নকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০০ কোটি টাকার মালিক সেই পিয়নের পরিচয় জানা গেছে। তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায়। তার নাম জাহাঙ্গীর আলম। নোয়াখালীর চাটখিল ও সোনাইমুড়িতে জাহাঙ্গীরের নিজস্ব বলয় রয়েছে। এখনো এলাকার রাস্তাঘাট ছেয়ে আছে তার বড় বড় বিলবোর্ড ও পোস্টারে।

সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিজের বাসার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই কে সেই পিয়ন, এ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা–কল্পনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে’পিয়ন আমার বাড়িতে কাজ করেছে, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না! কি বলবো, এটাই বাস্তব। আমি জানতে পেরে তার কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছি, তাকে চাকরিচ্যুত করেছি। যা করার ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী তার পরিচয় সম্পর্কে কোনো আভাস না দিলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র দাবি করছে সেই পিয়ন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম। সে খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহার খিল গ্রামের কেরানী বাড়ীর মৃত রহমত উলিয়ার ছেলে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম নৌকা পেতে লড়াই করেছেন। নৌকা না পেয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও শেষে প্রত্যাহার করে নেন প্রার্থিতা। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ মুহূর্তে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ার ভান করে অনৈতিক কাজ করছিলেন। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে হয়েছে। এক সময়ের পরাক্রমশালী জাহাঙ্গীর সম্পর্কে এমন আকস্মিক সতর্কবার্তায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, ৯০ দশকের দিকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের পানি খাওয়ানোর কাজ করতেন জাহাঙ্গীর আলম। নোয়াখালী থেকে আসা এই জাহাঙ্গীরকে নেতাকর্মীরা তখন থেকে ‘পানি জাহাঙ্গীর’ নামে চিনতেন। তিনি নেতাকর্মীদের মাঝে পরিচিতি লাভ করেন ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর থেকে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে শেখ হাসিনার খাদ্য বহনকারী হিসেবে ‘টিফিন ক্যারিয়ার’ তিনি নিজ হাতে রাখতেন বলেও জানা গেছে।

সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর এক বিশেষ সহকারীর (বর্তমানে এমপি) মাধ্যমে গণভবনে যাতায়াতের সুযোগ পান জাহাঙ্গীর। ২০০৯ সালে তিনি ঢাকার ইপিজেডে ঘুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। দলীয় নেতাকর্মীরা ভুয়া ব্যবসায় লিপ্ত হলে জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীকে ডেকে সরাসরি তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই ব্যবসার মাধ্যমে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের কাছে লবিং করেন। চাকরি দেওয়ার নামে এবং সরকারি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের নামে প্রধানমন্ত্রীর নাম বদনাম করে মোটা অংকের টাকা কামিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের অনেকেই তাকে পানি জাহাঙ্গীর বলে সম্বোধন করেন।

নোয়াখালীর চাটখিলে জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিতেন। এই পরিচয় দিয়ে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সহসভাপতির পদ নেন। এছাড়া এলাকায় চাকরি-বাণিজ্য, কমিশন-বাণিজ্য, প্রাইভেট বিদ্যালয় দখল, জমি দখল, ইটভাটা দখল, টেন্ডারসহ সন্ত্রাস চলতো তার নামে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে হুমকি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন বেশ কয়েকজন। জাহাঙ্গীর আলম তার ভাতিজা শিপনের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর গল্প বলে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে একসময় কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরোটা সময় এবং প্রধানমন্ত্রীর টানা তৃতীয় মেয়াদেরও কিছু সময় ছিলেন। ওই পরিচয় দিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করতেন। কিন্তু অবশেষে জাহাঙ্গীরের ছলচাতুরীর অবসান করেছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। তার আমন্ত্রণে সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে নোয়াখালীর চাটখিলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। যার কিছু ছিল জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত আয়োজনের অনুষ্ঠানে। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর আরেক পিয়ন আবদুল মান্নানকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। তবে তার বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার ব্যবহারের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

বিপুল সম্পদের বিষয়ে জানতে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন কয়েকবার বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিকেল পর্যন্ত তার মোবাইলটি খোলা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন।

চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির জানান, জাহাঙ্গর আলমের বাড়ি নাহারখিল ভিলায়।

About Nasimul Islam

Check Also

হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণের আর পাঁচ দিন, বিপাকে ভারত

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শেষ হতে চলেছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ। বর্তমানে, কূটনৈতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *