বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, “আগে খেলাপি ঋণের তথ্য লুকানো হতো। এখন আমরা সব তথ্য প্রকাশ্যে আনতে চেষ্টা করছি।”
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ চার লাখ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি। পুরো তথ্য সামনে এলে এই পরিমাণ ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। এই মুহূর্তে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর কোনো চিন্তা আমাদের নেই। ব্যাংকগুলোতে তদন্ত শেষ হলে খেলাপি ঋণ কমানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে জানা যাবে।
তিনি আরও জানান, “আমরা খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করছি। তথ্য যা-ই হোক, এখন সবই প্রকাশ করা হচ্ছে।”
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে একাধিকবার নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমবে। যদি না কমে, নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ রয়েছে, কারণ উচ্চ সুদহার তাদের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একক প্রচেষ্টায় মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি সরবরাহ, এবং যোগাযোগব্যবস্থার মতো বিষয়গুলোও বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন, ডলার বাজার স্থিতিশীল করা, এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কিছু সুফল মিলেছে, তবে আর্থিক খাত এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি।
তিনি আরও বলেন, “২০২৫ সালের শেষ নাগাদ কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কত টাকা কোন দেশে পাচার হয়েছে, তার স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে। তবে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সময় লাগবে, কারণ এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।”
এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। নভেম্বর ২০২৪-এ এই প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭.৬৬ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, জালিয়াতি, এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে আসায় ব্যাংকগুলো এখন সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এতে নিশ্চিত মুনাফা থাকায় ঋণের ঝুঁকি এড়ানো যাচ্ছে। ফলে বিদায়ী বছরে কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি ৭.৬৬ শতাংশ ছিল, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ৯.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জন সম্ভব হয়নি।